আধুনিক যুগে হাতঘড়ি কেবল সময় দেখার জন্য নয়, এটি হয়ে উঠেছে ফ্যাশন, আভিজাত্য এবং মর্যাদার এক অনন্য প্রতীক। বিশেষ করে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা এসব ঘড়িকে সাফল্যের স্মারক বা বংশপরম্পরার প্রতীক হিসেবে সংগ্রহ করেন।
এসব ঘড়ির দামের মূল কারণ এদের কারুকার্য, দুর্লভ রত্ন ও হীরা ব্যবহার এবং নিখুঁত প্রকৌশল। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের ১০টি সবচেয়ে দামি ঘড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
১. গ্রাফ ডায়মন্ডস হ্যালুসিনেশন
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঘড়ির তালিকায় শীর্ষে আছে গ্রাফ ডায়মন্ডস হ্যালুসিনেশন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই ঘড়িটি তৈরি করেছে গ্রাফ ডায়মন্ডস। এর চেয়ারম্যান লরেন্স গ্রাফ এই ঘড়ি তৈরির স্বপ্নদ্রষ্টা।
প্লাটিনামের ব্রেসলেটের ওপর ১১০ ক্যারেটের বিভিন্ন রঙের হীরার টুকরা বসিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি হীরাকে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে কাটা হয়েছে, যা এটিকে ফ্যাশন জগতে এক অনন্য প্রতীক হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।
২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেলওয়ার্ল্ড প্রদর্শনীতে এটি প্রথম উন্মোচন করা হয়। এর দাম ৫৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৬৬০ কোটি টাকা)।
২. গ্রাফ ডায়মন্ডস দ্য ফ্যাসিনেশন
দ্বিতীয় স্থানে আছে গ্রাফ ডায়মন্ডস দ্য ফ্যাসিনেশন, যা গ্রাফ ডায়মন্ডসের আরেকটি মাস্টারপিস। এটি একটি ঘড়ি হিসেবে এবং ব্রেসলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এতে ১৫২.৯৬ ক্যারেটের চিত্তাকর্ষক সাদা হীরা এবং একটি ৩৮.১৩ ক্যারেটের বিরল নাশপাতি আকৃতির হীরা রয়েছে।
এই বিরল হীরাটি ঘড়ির ডায়াল হিসেবে কাজ করে এবং আলাদা করে আংটি হিসেবেও পরা যায়। এর দাম ৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৬০০ কোটি টাকা।
৩. পাতেক ফিলিপ গ্র্যান্ডমাস্টার চাইম
সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত কোম্পানি পাতেক ফিলিপের এই ঘড়িটি ২০১৪ সালে তাদের ১৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উন্মোচন করা হয়। এর বিশেষত্ব হলো দুটি ডায়াল, যা নীল ওপালাইন (এক ধরনের দামি সাদা কাচ) দিয়ে সুসজ্জিত।
ঘড়িটির ডায়াল প্লেট এবং সময় নির্দেশক সংখ্যাগুলো ১৮ ক্যারেটের খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি। এর খোলস সাদা সোনা এবং বেল্ট কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি। এই ঘড়ির দাম ৩১ মিলিয়ন ডলার ( বাংলাদেশি টাকায় ৩৭২ কোটি টাকা)।
৪. ব্রেগেইট গ্র্যান্ড কমপ্লিকেশন মেরি অন্টোইনেট
এই ঘড়িটি ফরাসি রানি মেরি অন্টোইনেটের জন্য তার এক অনুরাগী তৈরি করা শুরু করেছিলেন। এটি তৈরি করতে ৪০ বছর সময় লেগেছিল এবং ঘড়িটি শেষ হওয়ার আগেই রানির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
১৮২৭ সালে তৈরি এই স্বর্ণে মোড়ানো ঘড়িটিতে চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার এবং থার্মোমিটারের মতো উন্নত বৈশিষ্ট্য ছিল, যা সেই সময়ে ছিল অবিশ্বাস্য। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে এটির জনপ্রিয়তা অনেক। এর দাম ৩০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৬০ কোটি টাকা)।
৫. জেজের লোকুত্র জুয়াইরি ১০১ মনচেট
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বের হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে জেজের লোকুত্র ব্র্যান্ড এই ঘড়িটি তৈরি করে। এটি সাদা সোনা দিয়ে তৈরি এবং এর নকশায় ৫৭৭টি হীরা ব্যবহার করা হয়েছে, যা এর আভিজাত্যকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে।
২০১২ সালে তৈরি এই ঘড়িটির দাম ২৬ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩১২ কোটি টাকা)।
৬. পাতেক ফিলিপ হেনরি গ্রেভস সুপার কমপ্লিকেশন
১৯৩৩ সালে মার্কিন ব্যাংক কর্মকর্তা হেনরি গ্রেভসের জন্য তৈরি করা এই সোনার পকেট ঘড়িটি তৈরি করতে সাত বছর সময় লেগেছিল।
সেই সময়ে এটি ছিল অত্যন্ত জটিল একটি ঘড়ি, যেখানে একটি ক্যালেন্ডার, মিনিট রিপিটার এবং সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য ছিল।
এর দাম ২৬ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩১২ কোটি টাকা)।
৭. শোপার্ড ২০১ ক্যারেট
এই ঘড়িটিতে মোট ২০১ ক্যারেটের ৮৭৪টি চমকপ্রদ হীরা খচিত আছে। এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো, একটি স্প্রিং-লোড পদ্ধতি, যা চাপ দিলে তিনটি হৃদয় আকৃতির হীরা (১৫ ক্যারেট গোলাপি, ১২ ক্যারেট নীল এবং ১১ ক্যারেট সাদা) ফুলের পাপড়ির মতো ফুটে ওঠে।
২০০০ সালে তৈরি এই সুইস ঘড়িটির দাম ২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩০০ কোটি টাকা)।
৮. রোলেক্স পল নিউম্যান ডেটোনা রেফ. ৬২৩৯
অভিনেতা পল নিউম্যানের জন্য তার স্ত্রী জোয়ান উডওয়ার্ড ১৯৬৮ সালে এই ঘড়িটি তৈরি করান। ঘড়িটিতে খোদাই করা ছিল, ‘ড্রাইভ কেয়ারফুলি মি’। ২০১৭ সালে নিলামে এটি মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।
স্টেইনলেস ইস্পাত দিয়ে তৈরি এই ঘড়িটির দাম ১৮.৭ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ২২৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা)
৯. জ্যাকব অ্যান্ড কোং বিলিয়নেয়ার ওয়াচ
এই ঘড়িটি তার নামের মতোই চমকপ্রদ। এতে ১৮৯ ক্যারেটের আকোশা হীরা খচিত আছে। এর ব্রেসলেট এবং ডায়াল উভয়েই ১৮ ক্যারেট সোনা এবং ১৬৭টি উপাদান ও ১৮টি রত্ন দিয়ে তৈরি।
২০১৫ সালে তৈরি এই ঘড়িটির দাম ১৮ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ২১৬ কোটি টাকা)।
১০. পাতেক ফিলিপ স্টেইনলেস স্টিল রেফ. ১৫১৮
এই ঘড়িটি পাতেক ফিলিপ কোম্পানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল। এটি উচ্চ গ্রেডের স্টেইনলেস ইস্পাত দিয়ে তৈরি এবং এর অনন্য খোলসের জন্য বিখ্যাত। এটি ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের এক দারুণ সমন্বয়।
এই ঘড়িটির দাম ১২ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৪৪ কোটি টাকা)।