ঢাকা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

ভূমিকম্প হলে কী করা উচিত, কী করা উচিত না?

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
সারা দেশে ভূমিকম্প। ছবি- সংগৃহীত

আজ শুক্রবার সকাল ১০:৩৮ মিনিটের দিকে রাজধানীসহ সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঘোড়াশাল উপজেলায় এবং এর মাত্রা ছিল ৫.৭।

বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমাদের ভূখণ্ডে শক্তিশালী কম্পন হলে কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে গুরুতর আঘাত বা মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তবে ব্যক্তিগত সতর্কতা ও সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা থাকলে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।’

ভূমিকম্পে হলে করণীয়

বিশ্বজুড়ে উদ্ধারকারী দল, জরুরি ব্যবস্থাপক ও বিশেষজ্ঞরা একমত, ভূমিকম্পের সময় ‘ড্রপ, কভার এবং হোল্ড অন’ পদ্ধতিই সবচেয়ে নিরাপদ। এর মানে হলো, কম্পন অনুভূত হওয়া মাত্রই মাটিতে নামা, শক্ত আসবাবের নিচে আশ্রয় নেওয়া এবং নিরাপদ অবস্থান ধরে রাখা।

ঘরে থাকলে- ডেস্ক বা টেবিলের নিচে আশ্রয় নেওয়া। মাথা ও ঘাড়কে হাত দিয়ে ঢেকে যতটা সম্ভব রাখা। জানালা, কাচ, ভারী আসবাবপত্র এবং রান্নাঘরের কাছাকাছি জায়গা থেকে দূরে থাকা।

বাইরে থাকলে- খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে জরুরি। ভবন, গাছ, চিমনি, বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং যে কোনো উঁচু বস্তু থেকে দূরে থাকা।

গাড়িতে থাকলে- নিরাপদ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা। সেতু, ওভারপাস, গাছ এবং বিদ্যুতের লাইনের নিচে গাড়ি না রাখা। কম্পন শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি থেকে না নামা।

পাহাড়ি ও সমুদ্রসৈকত এলাকায়- পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস ও গাছপালার ধ্বংসাবশেষ থেকে সতর্ক থাকা। সমুদ্রের কাছে থাকলে স্থানীয় সুনামি সতর্কতা মেনে চলা।

কেন এই পদ্ধতি নিরাপদ?

বিশ্বজুড়ে গবেষণা ও উদ্ধারকর্মীদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ভূমিকম্পে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি আসে পড়া বা উড়ে আসা বস্তু থেকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বা বাইরে দৌড়ানো বিপজ্জনক। কম্পনের তীব্রতায় মানুষ নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে এবং সরাসরি আঘাতের মুখে পড়তে পারে।

তাই ডেস্ক, টেবিল বা শক্ত দেওয়ালের পাশে থাকা এবং মাথা-ঘাড় ঢেকে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। এমনকি যদি আশেপাশে কোনো আসবাব না থাকে, ভিতরের দেওয়ালের পাশে বসে হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখাও আঘাত কমাতে সাহায্য করে।

ভবন নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি

ভবনকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধীভাবে নির্মাণ করুন।

ভারী আসবাবপত্র দেওয়ালের সাথে সংযুক্ত করুন।

প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, পানি এবং ব্যাটারিচালিত রেডিও ঘরে রাখুন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভূমিকম্প অনুভূত হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত এবং নিরাপদে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি।

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়ে গেছে। তাই শুধু সরকারি পরিকল্পনা নয়, প্রতিটি নাগরিকের প্রস্তুতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ‘ড্রপ, কভার ও হোল্ড অন’ মেনে চলা, নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া এবং সতর্ক থাকা—এই তিনটি পদক্ষেপ জীবনের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।