ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

যে ৭ লক্ষণে বুঝবেন শরীরে নীরবে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

ডায়াবেটিসকে আজ ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়—কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো বড় লক্ষণ দেখা যায় না। বিশ্বজুড়ে এই জীবনধারা-নির্ভর রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, যত দ্রুত ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ততটাই সহজ হয়। কারণ দীর্ঘমেয়াদে এটি শুধু শরীর নয়, জীবনের গুণগত মানকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

ডায়াবেটিস কেন এত বিপজ্জনক?

এই রোগ মূলত শরীরে চিনি বা গ্লুকোজ প্রক্রিয়াকরণের স্বাভাবিক ধারা বাধাগ্রস্ত করে। গ্লুকোজই আমাদের শক্তির প্রধান উৎস। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিস সাধারণত নীরবে, ধীরে ধীরে শরীরে প্রবেশ করে। প্রথমদিকে এর লক্ষণ এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না, কিংবা অবহেলা করেন সাধারণ ক্লান্তি বা পানিশূন্যতা ভেবে। তবে শরীর কিন্তু আগেই সংকেত পাঠাতে শুরু করে। নিচে এমন সাতটি লক্ষণ উল্লেখ করা হলো, যেগুলো দেখা দিলে দেরি না করে সতর্ক হওয়া উচিত।

নিয়মিত পানি খাওয়ার পরও তীব্র পিপাসা অনুভব করা: যদি দেখেন প্রচুর পানি খাওয়ার পরও অস্বাভাবিকভাবে পিপাসা পাচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, তবে সেটি ডায়াবেটিসের আগাম সংকেত হতে পারে। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের কোষ থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। বিশেষ করে রাতে বারবার পানি পিপাসা লাগা ও মুখ আঠালো হয়ে থাকা এর স্পষ্ট লক্ষণ।

ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ: রাতে ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হচ্ছে কি? রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করতে বেশি কাজ করে, ফলে প্রস্রাব বেড়ে যায়। এটি ডায়াবেটিসের অন্যতম সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ।

হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: ডায়েট বা ব্যায়াম না বদলালেও যদি ওজন দ্রুত কমে যায়, সেটি বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে। শরীর যখন কোষে গ্লুকোজ সরবরাহ করতে পারে না, তখন শক্তির উৎস হিসেবে পেশি ও চর্বি ব্যবহার শুরু করে—ফলে ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।

সবসময় ক্লান্ত ও দুর্বল লাগা: পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিয়েও যদি সারাদিন শক্তিহীন লাগে, তাহলে সেটিও ডায়াবেটিসের অগ্রগামী লক্ষণ হতে পারে। কারণ শরীর যথেষ্ট গ্লুকোজ ব্যবহার করতে না পারলে শক্তি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে সারাদিন অলসতা ও দুর্বলতা ভর করে।

চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া: রক্তে উচ্চ গ্লুকোজ চোখের লেন্স থেকে তরল টেনে নেয়, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে চোখে ফোকাস করতে সমস্যা হয়, ঝাপসা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি রেটিনার ক্ষতি ঘটিয়ে স্থায়ী দৃষ্টিহানি ঘটাতে পারে।

ছোট ক্ষত বা কাটা সারতে দেরি হওয়া: ডায়াবেটিস রক্তপ্রবাহ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ছোট ক্ষত বা ঘাও সহজে সারতে চায় না। বিশেষ করে পায়ের পাতায় ক্ষত হলে তা অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হাতে বা পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব অনুভব করা: উচ্চ রক্তচিনির প্রভাবে স্নায়ুর ক্ষতি বা ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’ দেখা দেয়। এটি সাধারণত হাতে, আঙুলে, পায়ে বা পায়ের আঙুলে ঝিনঝিন, জ্বালা বা অবশ অনুভূতি দিয়ে শুরু হয়। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এটি স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।