ব্যস্ত জীবনে অনেকে নিয়ম করে ব্যায়াম করেন। আবার অনেকেই শারীরিক পরিশ্রমের চেয়ে বিশ্রামেই অভ্যস্ত। অথচ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। এটি শুধু শরীরকে ফিট রাখে না বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে করে সচল ও প্রাণবন্ত।
ব্যায়াম বিপাকক্রিয়া বাড়ায়, শরীরের বাড়তি চর্বি ও ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে মস্তিষ্কে ‘সুখী হরমোন’ বা এন্ডোরফিনের নিঃসরণ ঘটিয়ে মানসিক চাপও হ্রাস করে।
ব্যায়ামের উপকারিতা:
হৃদ্পিণ্ড ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরল বাড়ায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর: ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন: অ্যানডোরফিন নামক ‘ফিল গুড’ হরমোন নিঃসরণ করে ব্যায়াম। এটি স্ট্রেস, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে দারুণ কার্যকর।
হাড় ও পেশি মজবুত করে: বিশেষত ওয়েট ট্রেনিং ও রেজিস্ট্যান্স ব্যায়াম হাড় শক্ত করে এবং বয়সজনিত হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ঘুম ও মনোযোগ উন্নত করে: নিয়মিত ব্যায়াম রাতে ভালো ঘুম ও দিনের বেলা মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামের অপকারিতা:
অতিরিক্ত ব্যায়ামে পেশি ক্ষয় ও চোট: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া অতিরিক্ত ব্যায়ামে মাংসপেশিতে টান, জয়েন্টে ব্যথা বা স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি (অতিরিক্ত ইনটেনস ব্যায়ামে): আগে থেকে হৃদ্রোগ থাকলে অতিরিক্ত বা হঠাৎ উচ্চমাত্রার ব্যায়ামে হার্ট অ্যাটাক বা অ্যারিদমিয়া (অনিয়মিত হার্টবিট) হতে পারে।
মানসিক চাপ ও অবসাদ: অতিরিক্ত শারীরিক চাপে কর্টিসল হরমোন বেড়ে গিয়ে মানসিক ক্লান্তি, ঘুমহীনতা ও মেজাজ খিটখিটে করে তুলতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনাল ব্যালান্সে প্রভাব: অতিরিক্ত এক্সারসাইজ নারীদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। কখনো কখনো এটি বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম অথবা ৭৫ মিনিট উচ্চমাত্রার ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। তবে ব্যক্তিভেদে প্রয়োজন ভিন্ন হতে পারে। ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসক বা ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্যায়াম নিঃসন্দেহে সুস্বাস্থ্যের এক অনবদ্য চাবিকাঠি। তবে তা হতে হবে নিয়ম মেনে, নিজের ক্ষমতা বুঝে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সুষম খাদ্যের সহাবস্থানে। না হলে উপকারের চেয়ে অপকারই হতে পারে বেশি। তাই ‘ফিট’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নয়, সুস্থ থাকার লক্ষ্যেই হোক ব্যায়ামের অভ্যাস।