বাংলায় একটি জনপ্রিয় প্রবাদ আছে—‘বন্ধু শত্রু হতে সময় লাগে না।’ এই কথাটি একেবারে মিথ্যা নয়, তবে মানা কঠিন। কারণ, যাকে সবচেয়ে কাছের, বিশ্বস্ত ও ভালোবাসার মানুষ ভাবা হয়, সেই যদি শত্রু হয়ে ওঠে, সেটি মেনে নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর।
তবু বাস্তবতা হলো, জীবনের নানা বাঁকে বন্ধুত্বের সম্পর্কেও ছেদ পড়ে—সেখানে দ্বন্দ্ব, ভুল বোঝাবুঝি বা হিংসা জায়গা করে নেয়। তখন সেই প্রিয় মানুষটি হয়ে উঠতে পারে জীবনের অপ্রত্যাশিত প্রতিপক্ষ।
তবে বন্ধু কখন, কী কারণে শত্রুতে পরিণত হয়—তা আগে থেকেই কিছুটা আঁচ করা সম্ভব। গিজমোডো ও উইকিহাউ–এর প্রকাশিত মতামতের আলোকে নিচে কিছু কারণ ও লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
কী কারণে বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়?
১. হিংসার বীজ: একসঙ্গে পড়াশোনা বা কাজের জায়গায় আপনি যদি কোনোভাবে এগিয়ে যান বা বারবার প্রশংসা পান, তখন বন্ধু হিংসার কারণে শত্রু হয়ে উঠতে পারে।
২. প্রেম নিয়ে দ্বন্দ্ব: যাকে আপনি ভালোবাসেন, আপনার বন্ধুর মনে হয়তো আগেই তাকে নিয়ে অনুভূতি ছিল। আপনি আগে এগিয়ে যাওয়ায় সে হঠাৎ শত্রু হয়ে উঠতে পারে।
৩. পারিবারিক দ্বন্দ্ব: বন্ধু যদি আপনার পরিবারের কারো প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং আপনি তা মেনে নিতে না পারেন, তাহলে সে মনে করতে পারে আপনি তার ‘পথের কাঁটা’।
৪. সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা: আপনার প্রতি অন্যদের বেশি আগ্রহ বা প্রশংসা বন্ধুর মধ্যে ঈর্ষা তৈরি করে। তখন সে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে।
৫. অপমানের প্রতিশোধ: যদি কোনো কারণে আপনি বন্ধুকে সবার সামনে অপমান করেন, সে সেই অপমানের বদলা নিতে শত্রুতার রূপ নিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন বন্ধু শত্রু হয়ে উঠছে?
১. গোপনীয়তা বাড়ছে: যে বন্ধু সবকিছু বলত, হঠাৎ অনেক কিছু গোপন করতে শুরু করল—এটা দূরত্বের লক্ষণ।
২. প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা: আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে বন্ধুর আচরণ সন্দেহজনক হলে সাবধান হোন।
৩. সাফল্যে উপেক্ষা: ভালো রেজাল্ট বা অর্জনে সে আনন্দ না পেয়ে দূরে সরে যাচ্ছে বা আপনাকে মনোযোগ ভাঙাতে চাচ্ছে—এটা শত্রুতার ইঙ্গিত।
৪. গোপন কথা ফাঁস: বিশ্বাস করে বলা কথাগুলো যদি সে হঠাৎ করে অন্যদের বলছে, বুঝবেন সে আপনাকে অপমান বা ক্ষতি করতে চায়।
৫. মিথ্যা গুজব রটানো: বন্ধুমহলে আপনার সম্পর্কে মিথ্যা কথা ছড়ানো শত্রুতার পরিষ্কার লক্ষণ।
বন্ধু শত্রু হয়ে গেলে কী করবেন?
১. নিজেকে দূরে সরিয়ে নিন: অমন মানুষের সঙ্গ যত দ্রুত ছাড়বেন, তত ভালো। তার উপস্থিতিই ঝুঁকিপূর্ণ।
২. নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন: নতুন মানুষদের সঙ্গে মিশলে পুরোনো বন্ধুর প্রভাব কমে যাবে।
৩. প্রতিশোধ নয়, সংযম: প্রতিশোধ নয়—নিজের মানসিক শান্তিকে প্রাধান্য দিন। ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. আবেগ নয়, বুদ্ধি: আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি সামলান। আবেগে সিদ্ধান্ত হলে ক্ষতি হতে পারে।
৫. সতর্কতা: অন্য বন্ধুদের ও পরিবারকে জানিয়ে রাখুন যাতে সে কারও ক্ষতি করতে না পারে।
৬. সরাসরি কথাবার্তা: সম্ভব হলে বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার চেষ্টা করুন।