শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১০:১০ এএম

বিশ্বের ১১ রেল স্টেশন, জানালা দিয়ে দেখা যায় শিল্প

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১০:১০ এএম

রেল স্টেশন। ছবি - সংগৃহীত

রেল স্টেশন। ছবি - সংগৃহীত

হয়তো আপনি ভেবেই রেখেছেন- বিমানই এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যাওয়ার দ্রুততম উপায়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আকাশের গতি যতই বাড়ুক, মানবসভ্যতার আবেগিক ভ্রমণ-সংগী হিসেবে রেলপথের বিকল্প আজও নেই। শতবর্ষ আগে যে ঢাকঢোল পিটিয়ে ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজও সেই চাকা যতটা পরিবহণের, ঠিক ততটাই স্মৃতির, স্থাপত্যের আর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বাহক।

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ট্রেন স্টেশনগুলো কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়- তারা একেকটি ইতিহাস-নির্মিত কাব্য। গথিক রিভাইভাল, আর্ট ডেকো, আর্ট নূভো, নব্য-মুরিশ, নিওক্ল্যাসিক্যাল কিংবা আধুনিক ভবিষ্যতবাদী ডিজাইন- সবকিছুই যেন নিখুঁত মিশ্রণে ফুটে ওঠে এই সব ‘গেটওয়ে’ স্থাপনাগুলিতে। এগুলো শহরে প্রবেশের প্রথম দরজা, আর শহর ছাড়ার শেষ স্মৃতি।

এই বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বিশ্বের সেরা, মনোমুগ্ধকর, স্থাপত্য-অসাধারণ ১১টি ট্রেন স্টেশনের গল্প। ইতিহাস, শিল্প, সমাজ- সব মিলিয়ে এক সমৃদ্ধ ভ্রমণ-উপাখ্যান।

নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার

সান্তিয়াগো ক্যালাত্রাভার স্বপ্নের প্রতিমূর্তি ‘ওকুলাস’ শুধু একটি স্টেশন নয়, বরং নিউইয়র্কের পুনর্জন্মের প্রতীক। ৯/১১ এর শোকাবহ স্মৃতি পেরিয়ে শহর যখন নতুন করে দাঁড়ালো, তখন এই ৮ লাখ বর্গফুটের ইস্পাত-কাচের স্থাপনাটি যেন আশা ও পুনর্গঠনের এক স্থাপত্য-সংগীত।

স্টেশনের ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সাদা মার্বেল-ঢাকা বিস্তীর্ণ হলঘর, ছাদের ৩৫৫ ফুট উঁচু স্কাইলাইট এবং প্রাকৃতিক আলোর অবাধ প্রবাহ। শহরের ১১টি সাবওয়ে লাইন, পাথ ট্রেন, ফেরি টার্মিনাল- সব মিলিয়ে এটি যেন নিউ ইয়র্কের পরিবহণ স্নায়ুতন্ত্র।

কুয়ালালামপুর রেলওয়ে স্টেশন 

১৯১০ সালে ব্রিটিশ স্থপতি আর্থার বেনিসন হাবব্যাক যখন এই স্টেশন নির্মাণ করেন, তখন কুয়ালালামপুর শহর ছিল ঔপনিবেশিক ভবিষ্যতের প্রতীক। নব্য-মুরিশ স্থাপত্যের মিনার, গম্বুজ, খিলান- তখনই একে আলাদা পরিচয় দেয়।
আজও সাদা-ক্রিম রঙের এই অ্যাংলো-এশীয় রেলস্টেশন শহরের মূল পরিবহণ কেন্দ্র হিসেবে দাপট দেখাচ্ছে। পর্যটকরা এখানে আসেন স্থাপত্যের সৌন্দর্য ও ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ছোঁয়া খুঁজতে।

কানাজাওয়া স্টেশন, জাপান

১৮৯৮ সালে নির্মিত কানাজাওয়া স্টেশনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয় ২০০৫ সালের রূপান্তর। বিশাল ‘টসুজুমি গেট’- জাপানি ঢোল থেকে অনুপ্রাণিত কাঠের প্রবেশদ্বার, সঙ্গে কাচ-ইস্পাতের ভবিষ্যতবাদী ছাদ- এই স্টেশনকে করেছে বিশ্বখ্যাত।

জাপানের ঐতিহাসিক কানাজাওয়া শহরের গেইশা জেলা, কেনরোকুয়েন গার্ডেন কিংবা সামুরাইদের বসতি- এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্টেশনের আধুনিক রূপ যেন ইতিহাসের সঙ্গে ভবিষ্যতের মিলনমেলা।

লিজ-গুইলেমিনস স্টেশন, বেলজিয়াম

ক্যালাত্রাভার আরেক সৃষ্টি। স্টেশনের কোনো দেয়াল নেই- ইস্পাত-কাচের ঢেউখেলানো ছাদের নীচে যেন পুরো শহরই এক সুড়ঙ্গহীন উন্মুক্ত মঞ্চ।

প্লাস্টিক কংক্রিটের পাঁজরযুক্ত বিশাল আর্কিটেকচার একপাশ থেকে অন্যপাশে যেন নদীর স্রোতের মতো বয়ে গেছে। যাত্রীরা যখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন, মাথার ওপরের এই ভাস্কর্য যেন পরিবহণের অভিজ্ঞতাকে রূপ দেয় শিল্পে।

মিলানো সেন্ট্রালে- ইতালী

মিলানোর কেন্দ্রস্থলে দাঁড়ানো এই বিপুলাকার স্টেশনটি যেন রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যকে নতুন যুগের শিল্পে রূপ দিয়েছে।

১১৮,০০০ বর্গফুট মার্বেল, পাঁচটি বিশাল ট্রেন শেড, পেশীবহুল ভাস্কর্য, লোহা-কাচের ছাদ- এই সব মিলিয়ে এটি ইউরোপের সবচেয়ে মহিমান্বিত রেলস্টেশনগুলোর একটি।

এখানে দাঁড়ালে মনে হয়- ট্রেন নয়, বরং আপনি সময়যন্ত্রে করে অতীতে ফিরে গেলেন।

হাঙ্গারবার্গ স্টেশন, অস্ট্রিয়া

ইনসব্রুকের পাহাড়বেষ্টিত শহরে নর্ডপার্ক ফানিকুলারের চারটি স্টেশনের প্রতিটিই একেকটি ভবিষ্যতবাদী শিল্পকর্ম।

হাঙ্গারবার্গ স্টেশন- ফানিকুলারের চূড়ান্ত স্টপ- কাচের বাঁকানো ঢেউ, বরফগলা জলের মতো প্রবাহমান ডিজাইন এবং শীতল নীলাভ রং ব্যবহার করে যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নির্মাণকে যুক্ত করেছে।

সিরকেচি স্টেশন, ইস্তাম্বুল

ইউরোপ থেকে এশিয়ায় প্রবেশের দরজা- সিরকেচি। ১৮৯০ সালে নির্মিত ফরাসি-অটোমান স্থাপত্যের এই স্টেশনকে তখন বলা হতো ‘আধুনিক ইস্তাম্বুলের গেটওয়ে’।

স্টেশনের ইটের ব্যান্ডিং, ঘড়ির টাওয়ার, দাগযুক্ত কাচের জানালা, গ্যাস লণ্ঠন- সব কিছুতেই আছে শতবর্ষ আগের ইউরোপীয় অভিজাত্য।

ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের শেষ স্টপ ছিল এখানে—যে ট্রেন জুড়ে ছিল গুপ্তচরবৃত্তি, প্রেম, রহস্য আর সাহিত্যিক কিংবদন্তির গল্প।

অ্যান্টওয়ার্পেন-সেন্ট্রাল, বেলজিয়াম

১৯০৫ সালে নির্মিত এই স্টেশনকে অনেকেই ‘রেলওয়ের ক্যাথেড্রাল’ বলেন। ২০ ধরনের মার্বেল ও পাথরের অলংকরণ, বিশাল খিলান, ত্রিস্তর প্ল্যাটফর্ম আর লোহার গম্বুজ- এটি স্থাপত্য-ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

২০০৯ সালের পুনর্গঠন পুরনো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনে, আবার আধুনিক টানেল ও উচ্চগতির রেল সংযুক্ত করে ভবিষ্যতের সঙ্গে।

হায়দারপাসা স্টেশন, তুরস্ক

বসপোরাস প্রণালীর তিনদিক ঘেরা ছোট্ট উপদ্বীপে দাঁড়ানো এই স্টেশনের দৃশ্য যেন পোস্টকার্ড থেকে উঠে আসা।

১৯০৯ সালে সুলতান মেহমেদ ভি–এর জন্মদিনে উদ্বোধিত এই স্টেশন একসময় এশিয়ার নানান অঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে আসত ইস্তাম্বুলে।

কফার্ড ব্যারেল-ভল্ট সিলিং, বিশাল জানালা, নব্যধ্রুপদী মুখ- সব মিলিয়ে এটি ইস্তাম্বুলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। আজ সংস্কারের কারণে বন্ধ হলেও জলপথে তাকালেই মন ভরে যায়।

সাউদার্ন ক্রস স্টেশন, মেলবোর্ন

মেলবোর্ন শহরের কেন্দ্রজুড়ে বিস্তৃত এই স্টেশনটির সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক অংশ হলো তার ঢেউখেলানো ছাদ- যা Y-আকৃতির স্তম্ভের ওপর ভর করে রয়েছে।

২০০৫ সালে নতুন নামে পুনর্গঠিত এই স্টেশন আজ অস্ট্রেলিয়ার রেল স্থাপত্যের গর্ব।

রেলের সৌন্দর্য- অবিনশ্বর যাত্রা

বিশ্বের এই ট্রেন স্টেশনগুলো শুধু পরিবহন নয়, শহরের পরিচয়, দেশের ইতিহাস, মানুষের স্বপ্ন আর সভ্যতার পথচলার গল্প বলে।

তারা মনে করিয়ে দেয়- যাত্রা মানে শুধু গন্তব্যে পৌঁছানো নয়, এটি অভিজ্ঞতা, স্মৃতি আর শিল্পের সমাহার।

যদি কখনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণে যান, চেষ্টা করুন- একটি ট্রেন যাত্রা যোগ করুন। হয়তো কোনো স্টেশনের আলো-ছায়া, কোনো খিলানের নিচে দাঁড়ানো মুহূর্ত, কোনো ভাস্কর্যের সামনে কয়েক মিনিট- আপনার ভ্রমণকে করে তুলতে পারে আরও গভীর, আরও স্মরণীয়।

Link copied!