রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এস এম নওশের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১১:২১ এএম

এক কাপ চা

এস এম নওশের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ১১:২১ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চা এখন বাঙালির এমন এক পানীয়; যা দেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, সুন্দরবন থেকে বান্দরবান— সবখানেই পান করা হয়। অথচ এক সময় এই বাঙালি ছিল চা-বিমুখ। এদের চায়ে অভ্যস্ত করতে ইংরেজদের কত কসরত করতে হয়েছে। এখন তো চা আমাদের রক্তের সঙ্গে এমন ভাবেই মিশে গেছে, যেন সেটা না খাইতে পারলে শরীরে জুত লাগে না। আমাদের সব বীরত্ব চায়ের আড্ডায়। বাঙালি চায়ের আড্ডায় দেশ—জাতি উদ্ধার করে। আমার আগের বিভাগে আমাদের নিজস্ব চায়ের ইলেক্ট্রিক কেটলি ছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও আমরা চা বানিয়ে খেতাম। আমাদের চিনি, চা পাতা, আদা, লেবু মজুদ থাকত। চিনি না থাকলে আমার চিনি ছাড়াও আপত্তি ছিল না। আসতেন পাশের ডিপার্টমেন্টের সিরাজ ভাই। এসেই হাক দিতেন— ‘কী ব্যাপার আজ আপনাদের রুম থেকে চায়ের গন্ধ পাই না কেন’। ভীষণ রসিক মানুষ ছিলেন। আসতেন হাসপাতালের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ ভাই। — ‘কী ভাই  আইজ কা আপনেরা চা-চু খান নাই?’
— আরে না না বসেন।
চায়ের সঙ্গে টাও আনানো হত। সেই সঙ্গে চলত আড্ডা। উনি ভীষণ হাসাতে পারতেন। আমাদের চায়ের জন্য আলাদা চাঁদা ধরা থাকত। আমরা সবাইকে চা খাওয়াতাম। আসলে চা খাওয়াটা ছিল উনাদের উপলক্ষ। লক্ষ্য ছিল আমাদের সঙ্গে খানিকটা গল্প করে যাওয়া। এ তো গেল আমার গল্প। 
এবার আসি অন্য গল্পে।
ইংরেজরা যখন দেশিদের চায়ে অভ্যস্ত করে ফেলল তখন দেশি এবং বিদেশের বাজারে প্রচুর চায়ের চাহিদা দেখা দেওয়ায় তারা আসাম পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং পূর্ববঙ্গের সিলেট, শ্রীমঙ্গলে চাষ শুরু করল। এর জন্যে দরকার ছিল শ্রমিক। এদের তারা আনল বিহার ইউপি থেকে হতো দরিদ্রদের। এ ছাড়াও স্থানীয় পাহাড়ি আদিবাসীদের কেউ তারা যুক্ত করল। খুব অল্প মজুরিতে তাদের এই কাজে বাধ্য করল বংশ পরম্পরায়। আজ ইংরেজ চলে গেছে কত বছর। কিন্তু তাদের মজুরি তেমন বাড়েনি। আমি যখন ডানকানের চা বাগান দেখতে যাই চন্ডিছড়ায়; তখন শুনেছিলাম এদের মজুরি ছিল দৈনিক ৮৫ টাকা। চা শ্রমিকেরা আন্দলন করেছিল তাদের দৈনিক মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা করতে। সেটাও মালিক পক্ষ মানেনি। তাদের এখন মজুরি দৈনিক ১৪৫ টাকা।
চা গাছে কিন্তু পুরো গাছের পাতাকে চা পাতা হিসেবে তোলা হয় না। একদম কচি পাতাগুলোকে নেওয়া হয়। তারপর সেটা তাদের প্লান্টে নিয়ে শুকিয়ে গুঁড়া করা হয়। বড় পাতাগুলো দেখেছি শ্রমিকদের ভর্তা করে ভাত দিয়ে খেতে। শ্রমিকেরা যাতে সেইভাবে আন্দোলনে যেতে না পারে সেই জন্যে ডানকানের বাগানের খুব কাছেই দেখলাম ভাট্টি খানা। যেখানে দেশি চোলাই মদ বিক্রি হয়। ছেলে শ্রমিকেরা মজুরি পেয়েই গিয়ে ভাট্টি খানায় ঢুকে। মজুরির বেশিরভাগ টাকাই চলে যায় মদ গিলতে। শ্রমিকদের যাতে খিদে কম পায়, এজন্যে বড় মগে করে তাদের কড়া চা পান করানো হয় ফ্রিতে। আমি তাদের কুলি লাইনে মানবেতর জীবনযাত্রা দেখেছি। বাচ্চা জন্ম দিয়েও সেই মা চলে এসেছে কাজে। কারণ নইলে যে সেদিনের মজুরি কাটা। ছোট ছোট পাতার ২৪ কেজি তুলতে পারলে মিলবে দিনের পুরো মজুরি।
দার্জিলিংয়ে বিখ্যাত মাকাইবাড়িটি এস্টেটে গেছিলাম। সেটা ছিল একটা ট্যুর প্যাকেজ। টয়ট্রেনে দার্জিলিং থেকে কার্সিয়াং আপডাউন। সেই সঙ্গে মাকাইবাড়িটি স্টেট ভ্রমণ। সেটাও অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। এর মালিক বাঙালি। ব্যানার্জি পরিবারদের এটা চার পুরুষের ব্যবসা। বর্তমানে এর মালিকানা বদল হয়েছে। এদের ব্যক্তিগত মিউজিয়ামে দেখলাম শিকার করা বিভিন্ন পশু-পাখি এবং বড় বড় হরিণ মহিষের ট্রফি। সেগুলো স্টাফ করা। তাদের বাগানগুলো উঁচু পর্বতের ঢালে। কুয়াশায় মোড়ানো। সত্যজিত রায়ের ফেলুদার প্রিয় ছিল এদের চা। অনেক সাহিত্যিকের লেখাতেও এসেছে এই চা বাগান; বিশেষ করে সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ প্রমুখ। সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত কালবেলার নকশাল বিপ্লবী অনিমেষ উঠে এসেছিল জলপাইগুড়ির এক চা বাগান থেকে। গানেও এসেছে চা বাগান। তাই শেষ করলাম ভুপেন হাজারিকার গানের ক’টা লাইন দিয়ে। 
একটি কুড়ি দুটি পাতা
রতনপুর বাগিচায়
লছমি আজো তোলে
ও লছমি আজো তোলে
সবুজ সবুজ বাহারে
দুলত দোদুল আহারে

আরবি/ আরএফ

Shera Lather
Link copied!