রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

আজ নতুন বন্ধু পাতানোর দিন

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

নতুন বন্ধু দিবস। ছবি- সংগৃহীত

নতুন বন্ধু দিবস। ছবি- সংগৃহীত

আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে নতুন বন্ধু দিবস, একটি দিন যেদিন মানুষ পুরোনো সম্পর্ককে মনে করে, নতুন সম্পর্কের দিকে হাত বাড়ায়, আর বন্ধুত্বের সেই মানবিক উষ্ণতা আবারও উপলব্ধি করে।

মানুষের জীবনে বন্ধুত্ব শুধু একটি সামাজিক সম্পর্ক নয়; এটি মানসিক প্রশান্তি, নিরাপত্তা ও আবেগের অন্যতম আশ্রয়স্থল। কিন্তু ব্যস্ততার এই যুগে বন্ধুত্বের সেই সহজ ও নির্ভেজাল আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমে। তাই ‘নতুন বন্ধু দিবস’ যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনে নতুন মানুষকে গ্রহণ করা মানে জীবনের নতুন আলোকে স্বাগত জানানো।

বন্ধুত্ব মানবসভ্যতার আদিকাল থেকে সমাজ গঠনের অন্যতম উপাদান। কখনো শিকার যুগে সহযোদ্ধা, কখনো কৃষিভিত্তিক সমাজে শ্রমবন্টন, কখনো আধুনিক জীবনে সহকর্মী সব সময়ই বন্ধুত্ব টিকে আছে জীবনের প্রতিটি পর্বে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, বন্ধুত্ব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা, হাসা, কষ্ট ভাগ করে নেওয়া এসব কর্মকাণ্ড মস্তিষ্কে ডোপামিন ও অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা আমাদের সুখী ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখে।

বন্ধুত্ব তাই শুধু আনন্দ নয়, এটি মানসিক চিকিৎসারও এক প্রাকৃতিক উপায়।

বাংলা সাহিত্য, গান ও সিনেমায় বন্ধুত্বের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া জনপ্রিয় গান “বন্ধু চল রোদ্দুরে” আমাদের মনে করিয়ে দেয় বন্ধু মানেই মুক্তি, হাসি, আর নির্ভার জীবনের এক উজ্জ্বল রঙ।

“বন্ধু চল রোদ্দুরে, মন কেমন মাঠজুড়ে, খেলব আজ ওই ঘাসে…” এই লাইনগুলো শুধু সুর নয়, জীবনের এক অনুভবযেখানে বন্ধুর উপস্থিতি মানে সব বাধা জয় করা এক আত্মিক শক্তি।

একইভাবে সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত বন্ধুত্বকে দেখেছেন জীবনের সবচেয়ে স্নিগ্ধ সম্পর্ক হিসেবে। তাঁদের লেখায় বন্ধুরা কখনো হয়ে ওঠে প্রেরণা, কখনো নিঃসঙ্গতার ওষুধ।

‘নতুন বন্ধু দিবস’ (New Friends Day) প্রথম পালিত হয় ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় তার আগের বছর, ২০০৬ সালে। ‘Holiday Calendar’ এবং ‘Days of the Year’ নামক উৎসব-তালিকা অনুযায়ী দিনটি নির্ধারিত হয় নতুন বন্ধুত্বের গুরুত্ব উদ্‌যাপনের উদ্দেশ্যে।

প্রথম দিকে এই দিবসটির প্রচলন সীমিত ছিল, কিন্তু ২০১২ সালের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে মানুষ এ দিনটিকে বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করে—কেউ নতুন বন্ধু তৈরি করে, কেউ পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ পুনরায় স্থাপন করে, আবার কেউ বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করে পোস্ট দেয়।

এভাবেই ‘নতুন বন্ধু দিবস’ পরিণত হয় বন্ধুত্বের বিশ্বজনীন প্রতীকে।

বন্ধুত্বের এক বিশেষ সৌন্দর্য হলো, এটি কখনো পুরোনো বা নতুন দিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। একটি প্রাচীন ইংরেজি প্রবাদে বলা হয়: ‘Make new friends, but keep the old; one is silver, the other gold.’ অর্থাৎ, নতুন বন্ধু তৈরি করুন, তবে পুরোনো বন্ধুকেও আঁকড়ে ধরুন-কারণ একজন রূপা, আরেকজন সোনা।

পুরোনো বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের ইতিহাসের সাক্ষী, আর নতুন বন্ধুত্ব আমাদের ভবিষ্যতের আশার আলো। দুয়ের সংমিশ্রণই একজন মানুষকে সম্পূর্ণ করে তোলে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ৩০ বছর বয়সের পর মানুষ নতুন বন্ধুত্ব করতে তুলনামূলক কম আগ্রহী হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এই বাস্তবতা পাল্টে যাচ্ছে। এখন মানুষ আগের চেয়ে সহজে নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারছে পেশাগত, সাংস্কৃতিক কিংবা অভিরুচিভিত্তিকভাবে।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আগে যেখানে বন্ধুত্ব মানে ছিল একসঙ্গে আড্ডা, মাঠে খেলা, কিংবা বই পড়ার সঙ্গী এখন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে স্ক্রিনের এপারে-ওপারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটার), কিংবা লিংকডইন মানুষকে নতুনভাবে সংযুক্ত করছে। যদিও এতে কখনো কখনো সম্পর্কের গভীরতা কমে যাচ্ছে, তবে পরিচয়ের ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে বহুগুণে।

ডিজিটাল বন্ধুত্বের ইতিবাচক দিক হলো এটি দূরত্ব ভাঙে, সংস্কৃতি মেশায়, আর নতুন চিন্তার জন্ম দেয়। তবে নেতিবাচক দিকও রয়েছে: অনলাইন প্রতারণা, ভুয়া পরিচয়, কিংবা মানসিক চাপ। তাই নতুন বন্ধুত্ব গড়তে হলে সচেতনতা ও সতর্কতা জরুরি।

নতুন বন্ধুত্ব মানে নতুন সম্ভাবনা, নতুন শেখা, নতুন আবেগ। কিন্তু প্রতিটি নতুন সম্পর্কের মধ্যেই থাকে কিছু অনিশ্চয়তা।

ভুল বন্ধুত্ব কখনো ক্ষতি ডেকে আনতে পারে মনস্তাত্ত্বিক, আর্থিক কিংবা সামাজিকভাবে। সেজন্যই অনেকে বন্ধুত্বে ধীরে এগোতে পছন্দ করেন। তাদের কাছে বন্ধুত্ব মানে আকস্মিক আবেগ নয়, বরং বিশ্বাস ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক বন্ধন।

তবুও নতুন বন্ধুত্ব মানবজীবনের এক অপরিহার্য অংশ। এটি মানুষকে নতুন চিন্তা, নতুন অভিজ্ঞতা ও নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়।

‘নতুন বন্ধু দিবস’ মূলত মানুষকে নতুন সম্পর্কের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। পরিবার, পেশা বা শিক্ষা জীবনের বাইরে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধতা ভাঙতে পারি।

আজকের দিনটি তাই হতে পারে— নিজের চারপাশের নতুন মানুষদের দিকে একটু মনোযোগ দেওয়ার, তাদের গল্প শোনার, নতুনভাবে সম্পর্ক শুরু করার, এবং জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করার একটি উপলক্ষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন বন্ধুত্ব মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

বন্ধুত্ব এমন এক বন্ধন যা জাতি, ধর্ম, শ্রেণি, ভাষা সব সীমা অতিক্রম করে। যেমন প্রাচ্যের দার্শনিকেরা বলেছেন, বন্ধুত্ব হলো এমন একটি সম্পর্ক যেখানে ‘আমি’ এবং ‘তুমি’র সীমারেখা মুছে যায়।

বন্ধুত্বে কোনো স্বার্থ থাকা উচিত নয়, কিন্তু বাস্তব জীবনে বন্ধুত্বের মাধ্যমেই মানুষ শিখে নেয় সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। নতুন বন্ধু দিবস তাই কেবল এক দিনের উদ্‌যাপন নয়, এটি মানবিকতার পুনরাবিষ্কার।

আজকের দিনে করণীয়, পুরোনো বন্ধুকে আজ একটি ফোন দিন। নতুন পরিচিত কারও সঙ্গে এক কাপ চা পান করুন। অফিস, ক্লাস বা আশেপাশে যে মানুষটি প্রতিদিন দেখা হলেও অপরিচিত থেকে যান তার সঙ্গে কথা বলুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, বাস্তব জীবনে নতুন একটি বন্ধুত্ব শুরু করুন।

এভাবেই বন্ধুত্বের এই বিশেষ দিনে আমরা সবাই একটু করে মানবিক হতে পারি।

আজকের নতুন বন্ধু দিবস আমাদের শেখায় জীবনের প্রতিটি পর্বেই নতুন মানুষকে জায়গা দিন, কারণ প্রতিটি নতুন সম্পর্ক আমাদের ভেতরের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

বন্ধুত্ব মানে শুধু পরিচয় নয়; এটি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও আনন্দের নাম। নতুন বন্ধুদের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি পৃথিবীকে নতুন করে দেখতে, নতুনভাবে ভালোবাসতে, আর সবচেয়ে বড় কথা মানুষ হিসেবে আরও পূর্ণ হতে।

Link copied!