কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা, তথ্য অনুসন্ধান, ই-মেইল খসড়া, গল্প লেখা বা একাকিত্ব কাটানোর জন্য চ্যাটবট অনেকেই ব্যবহার করেন। এআই চ্যাটবট মানুষের মতো প্রাকৃতিক আলাপের দক্ষতা প্রদর্শন করে, তাই ব্যবহারকারীরা এটিকে ভরসাযোগ্য মনে করেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই ভরসার আড়ালেই রয়েছে বিপদ। চ্যাটবটের সঙ্গে আপনার করা আলাপ একেবারেই গোপন নয়। ব্যবহারকারীর দেওয়া তথ্য সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ বা ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবে তথ্য ফাঁস হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে কিছু সংবেদনশীল তথ্য কখনোই চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।
জেনে নিন যে ১০ তথ্য কখনোই চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করবেন না:
১. ব্যক্তিগত তথ্য
ব্যক্তিগত তথ্য বলতে বোঝায় আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল বা জন্ম তারিখ। এ ধরনের তথ্য একত্রিত করলে সহজেই পরিচয় শনাক্ত করা যায়। চ্যাটবটের মাধ্যমে এসব তথ্য দেওয়ার ফলে আপনার পরিচয় চুরি, ফিশিং আক্রমণ বা ট্র্যাকিংয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
২. গোপন কথা বা স্বীকারোক্তি
অনেকে একাকিত্বে বা মানসিক চাপের মধ্যে চ্যাটবটকে নিজের গোপন কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে মনে রাখবেন, চ্যাটবট কোনো বন্ধু বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নয়। আপনার স্বীকারোক্তি সংরক্ষিত হতে পারে, পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ বা বিশ্লেষণে ব্যবহার হতে পারে, এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসও হতে পারে।
৩. কর্মস্থলের গোপনীয় তথ্য
চ্যাটবট ব্যবহার করে কর্মস্থলের নথি বা ব্যবসায়িক তথ্য শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ।
অনেক কোম্পানি সতর্ক করছে যে কোনো ধরনের গোপন তথ্য বা কৌশল চ্যাটবটে শেয়ার করা যাবে না। চ্যাটবটের ইনপুট ব্যবহার করে এটি আরও উন্নত হয়। ফলে সংরক্ষিত তথ্য বাইরে চলে যেতে পারে এবং কোম্পানির নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
৪. আর্থিক তথ্য
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড বা সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা বিপজ্জনক। এসব তথ্য সাইবার অপরাধীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।
৫. চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য
চ্যাটবট কখনোই চিকিৎসক নয়। চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য যেমন প্রেসক্রিপশন, চিকিৎসার ইতিহাস বা বিমার তথ্য শেয়ার করলে তা চুরি বা ভুল তথ্যের শিকার হতে পারে।
৬. অশ্লীল বা আপত্তিকর
কিছু চ্যাটবট আপত্তিকর বা অবৈধ বিষয় শনাক্ত করে ব্লক করে। তবে আপনি যা লিখছেন, তা রেকর্ড হতে পারে। যৌন বা অবমাননাকর আলাপ, বেআইনি তথ্য বা অশ্লীল কনটেন্ট শেয়ার করলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ভবিষ্যতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৭. পাসওয়ার্ড
চ্যাটবটের সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করা একেবারেই নিরাপদ নয়। এটি আপনার ই-মেইল, ব্যাংক বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
৮. আইনি জটিলতা
চ্যাটবটকে চুক্তি, মামলা বা আইনি বিবাদের পরামর্শের জন্য ব্যবহার করা বিপজ্জনক। এআই কখনোও একজন আইনজীবীর বিকল্প নয়। ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে ভবিষ্যতে আইনি সমস্যা তৈরি হতে পারে।
৯. সংবেদনশীল ছবি বা নথি
পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ব্যক্তিগত ছবি চ্যাটবটে আপলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
১০. যা আপনি অনলাইনে দেখতে চান না
যদি কোনো তথ্য ভবিষ্যতে অনলাইনে ছড়াতে না চান, চ্যাটবটকে তা শেয়ার করবেন না। এআই চ্যাটবটের আলাপ অনেক সময় পুরোপুরি গোপন থাকে না।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এআই চ্যাটবটের সঙ্গে ব্যবহারকারীর যোগাযোগ গোপন নয়। তাই ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য কখনোই শেয়ার করা উচিত নয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, চ্যাটবট কখনো মানুষের বন্ধু বা পরামর্শদাতার বিকল্প নয়। সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করলে মানসিক ও সামাজিক ঝুঁকি থাকে।
চ্যাটবটকে শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য, শিক্ষামূলক সাহায্য বা বিনোদনের জন্য ব্যবহার করুন। যদি সংবেদনশীল পরামর্শ বা চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, উপযুক্ত পেশাদার বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করুন।