জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
সোমাবর (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনার-১ এ তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে যে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে পরিকল্পিত ও বৃহৎ পরিসরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল–১ এর তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়—
১) উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান,
২) আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ,
৩) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা,
৪) রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা,
৫) আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বড় স্ক্রিনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রায় প্রচার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজেও লাইভ সম্প্রচার চলছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়। পুনর্গঠনের পর প্রথম মামলাটি ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, সেদিনই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার শুরুতে শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
বহুবার সময় নেওয়ার পর চলতি বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পাঁচ অভিযোগেই গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক। সাবেক আইজিপি মামুন একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি।
অভিযোগ গঠনের দিন সাবেক আইজিপি মামুন স্বীকারোক্তি দেন যে তিনি গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং তিনি রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হওয়ার আবেদন করেন। ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস চান। সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষ থেকেও তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ খালাসের আবেদন করেন।

