বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া ও এনামুল হক দিপু

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৫, ১২:০৮ এএম

ডিএসসিসিতে স্বঘোষিত রাজা প্রকৌশলী রুবেল

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও এনামুল হক দিপু

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৫, ১২:০৮ এএম

ডিএসসিসিতে স্বঘোষিত রাজা প্রকৌশলী রুবেল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সীমাহীন লুটপাটের হোতা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল এখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বঘোষিত রাজা। পতিত সরকারের আমলের ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে সে সময় দাপটের সঙ্গে চাকরি করে নানা ফাঁক-ফোকরে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই রুবেল। সামান্য সহকারী প্রকৌশলী হয়েও তার তখনকার দাপট এবং তদ্বির বাণিজ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। 

মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জাতীয়তাবাদী ঘরানার সংশ্লিষ্টতা সত্ত্বেও তিনি রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান। চাউর আছে, মেয়র তাপসের বদান্যতায় তিনি বিপুল অর্থের মালিক হন। সেই অর্থে তিনি গড়ে তোলেন ‘আড্ডা’ নামের একটি চেইন রেস্টুরেন্ট। শুধু তাই নয়, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শী হয়েও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। অথচ সেই সময় এই রুবেল সূত্রাপুর ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন বলে শোনা যায়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকাকালে রুবেল সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ডিএসসিসিতে যোগ দেন।
পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে সাঈদ খোকন মেয়র থাকাকালে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আইনি লড়াইয়ে চাকরি ফিরে পেয়ে নানা ছলচাতুরিতে তৎকালীন মেয়র তাপসের ঘনিষ্ঠতা লাভ করেন। তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় এই মোক্ষম দাওয়াই প্রয়োগ করে তিনি তাপসকে ঘায়েল করেন এবং পুরোপুরি কব্জায় নিয়ে নেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ভিন্ন মতাবলম্বী কর্মচারীদের ওপর যেখানে রীতিমতো খড়্গ নেমে আসত, সেখানে রুবেলের গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড়ও পড়েনি সে সময়। বলতে গেলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময় ধরে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিরাপদ। শুধু তাই নয়, তদ্বির বাণিজ্যে সিদ্ধহস্ত এই প্রকৌশলী একে একে বহু সুবিধা আদায় করে নেন। সেই সময়কার মেয়র তাপস রুবেলের কোনো কাজে কিংবা আবদারে কখনো ‘না’ বলেননি। রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে, সে সময় ধানমন্ডি এলাকায় ডিএসসিসির একাধিক রেস্টুরেন্ট বেনামে লিজ নিয়ে তিনি নিজেই পরিচালনা করছেন এখনো। এর মধ্যে ডিঙ্গি, পানসি ও সাম্পান উল্লেখযোগ্য। 

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গোলাম কিবরিয়া রুবেল ভোল পাল্টে জাতীয়তাবাদী ঘরানার ধারক-বাহক সেজে যান। এ ক্ষেত্রে সাদেক হোসেন খোকার সময়ে নিয়োগকে তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং মির্জা আব্বাস, কখনো ইশরাক হোসেন, কখনো ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুর নাম ভাঙাচ্ছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, জাতীয়তাবাদী ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে ডিএসসিসিতে তিনি এখন স্বঘোষিত নেতা। বলতে গলে গোটা ডিএসসিসি তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এখানে তিনি গড়ে তুলেছেন তদ্বির বাণিজ্যের এক বিশাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডকেটে রয়েছেন, সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মেহেদী হাসান লিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা সৈয়দ মুকিতুল হাসান রঞ্জু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে আলম, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আহসান মানদুদ ও ডিএসসিসি শ্রমিক দল নেতা আরিফুজ্জামান প্রিন্স। এই সিন্ডিকেটের অঙ্গুলি হেলনেই নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন থেকে শুরু করে ডিএসসিসির তাবৎ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রুবেলের দাপটে ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখন অসহায়। এমনকি আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই সময়েও বেশ বাড়-বাড়ন্ত শোনা যায়। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে অন্যায়ভাবে পদ আঁকড়ে থাকা আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই রুবেলের সঙ্গে হাত মেলান। এ জন্য তাদের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা খসে গেছে। এ কারণেই গণমাধ্যমে আওয়ামী দোসরদের নিয়ে ক্রমাগত প্রতিবেদন প্রকাশের পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, এসব আওয়ামী কর্মচারীরা এতদিন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকলেও এখন একজোট। ঝড়-ঝঞ্ঝা যাই আসুক না কেন, একজোট হয়ে মোকাবিলা করবেন এমন অঙ্গীকারবদ্ধ তারা। এই সুযোগে রুবেল সিন্ডিকেটকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে তারা এক ছাত্রলীগ নেতাকে রাজস্ব কর্মকর্তা থেকে উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেন। এ জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে ডিএসসিসিতে কান পাতলেই শোনা যায়। এ ছাড়া আরেক আওয়ামী দোসর ডিএসসিসির সচিব বশিরুল হক ভূঁইয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে রুবেল বাজার সার্কেল, মার্কেট নির্মাণ সার্কেল এবং অঞ্চল-৭ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর মতো তিনটি লোভনীয় জায়গায় নিজেকে পদায়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে, স্থপতি হয়েও গত ২১ বছর ধরে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের পদ আঁকড়ে থাকা আওয়ামী দোসর সিরাজুল ইসলামকে এই রুবেলই এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি ল্যাবএইডের বিপরীতে আট কাঠা আয়তনের জায়গা দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই জায়গাতেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘আড্ডা’ নামের রেস্টুরেন্টটি।

নাম ভাঙানো প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত শুক্রবার রাতে রূপালী বাংলাদেশের কাছে উল্টো জানতে চান, এই ব্যক্তি কী বিএনপি করে! তা ছাড়া আমি তো মেয়র নই, আমার নাম ভাঙাবে কেন! তিনি বলেন, আমি এই নামের কাউকে চিনি না।

তবে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনু রুবেলকে চেনেন বলে জানালেন। বললেন, তাকে আমি চিনি গত ৩০ বছর ধরে। তিনি এক সময় সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তখন তিনি ডিএসসিসিতে চাকরি করতেন না। আমি ডিএসসিসিতে খুব একটা যাই না। গত ৫ আগস্টের পর একটি কাজে গিয়েছিলাম। আমি তো কিছুই জানি না। আমাদের নাম ভাঙিয়ে তিনি কী সুবিধা পাচ্ছেন, জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই আমরা ডেকে পাঠাব। 

সার্বিক বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া রুবেল বারবার অফিসে যাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করছিলেন। পরে অভিযোগ সত্যি না মিথ্যে এটুকু বলার অনুরোধ জানালে রুবেল বলেন, মিথ্যে। আওয়ামী লীগ আমলে আমি বারবার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি আমাকে ছয়বার সাসপেন্ড ও চারবার বদলি করা হয়েছে। এই সময়ে ডিএসসিসিতে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ সম্পর্কে তার ক্ষুব্ধ বক্তব্য ‘আমি কী মেয়র নাকি’।

এদিকে গোলাম কিবরিয়া রুবেলের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি ল্যাবএইডের বিপরীতে যে আট কাঠা জমি দখলের অভিযোগ আছে- সেই জায়গার মালিক রাফিয়া আবেদীন কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। ৬ মে অপরাহ্ণে তিনি জানান, কাজের সুবাদে তাকে প্রায়ই ডিএসসিসিতে যেতে হতো। সেই সুযোগে গোলাম কিবরিয়া রুবেল তার কাছেও আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে এই স্থাপনার প্রতি তার নজর পড়ে। এরপর থেকে এটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন তিনি। অবশেষে তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রত্যক্ষ মদদে স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি জাকির হোসেন স্বপনের সহযোগিতায় তিনি স্থাপনাটি দখল করে ‘আড্ডা’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলেন। রাফিয়া বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমি এই স্থাপনা উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি, পারছি না। ভেবেছিলাম, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আমি সুবিচার পাব। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও আমি পেরে উঠছি না। উল্টো আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

Link copied!