মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

পাক-ভারত যুদ্ধবিরতিতে কেন আসছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

পাক-ভারত যুদ্ধবিরতিতে কেন আসছে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা?

ইন্দিরা গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

পেহেলগামে ঘটে যাওয়া হামলার পর সীমান্তে সংঘাতে জড়ায় ভারত-পাকিস্তান। মে মাসের মধ্যে বিমান হামলা, ড্রোন হামলা ও মিসাইল চালানো হয় দুই পক্ষ থেকেই।

এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। অবশেষে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা সরাসরি দুই দেশের সেনাপ্রধানদের আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব হয়।

পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির পরপরই হঠাৎ করে  ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তাতে পরাজিত হয়ে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভারতে।

বিষয়টি প্রথম সামনে আনেন কংগ্রেস, কংগ্রেসের সমর্থক এবং সামাজিক মাধ্যমের একাংশ।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হেরে গিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সামনে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর লেফটেনান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজী।

এখন কেন পাকিস্তানকে আত্মসমর্পণ না করিয়ে যুদ্ধবিরতি মেনে নিল নরেন্দ্র মোদির সরকার? সেই প্রশ্ন কংগ্রেসের তরফে সরাসরি তোলা  না হলেও প্রসঙ্গটি নানা টিভি চ্যানেলের ‘টক শো’তে  তুলেছেন অনেকেই।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সময়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা আবারও প্রচার করছে কংগ্রেস।

গত সপ্তাহের ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে মধ্যস্থতা করেছে, সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সমর্থকরা তুলে আনছেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কথাও।

ইন্দিরা গান্ধী ও রিচার্ড নিক্সন
ইন্দিরা গান্ধী ও রিচার্ড নিক্সন

কী বলা হচ্ছে ৭১-এর যুদ্ধ নিয়ে?

কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক এক্স হ্যান্ডেল থেকে প্রচার করা হয়, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের একটি ছবি।

সেখানে লেখা হয়েছে, ‘ইন্দিরা গান্ধী নিক্সনকে বলেছিলেন যে আমাদের শিরদাঁড়া সোজা আছে। আমাদের ইচ্ছাশক্তি এবং যে পরিমাণে রসদ রয়েছে তা দিয়ে আমরা সব নৃশংসতার মোকাবিলা করতে পারি। সেই দিন আর নেই যখন তিন-চার হাজার মাইল দূরে বসে কোনো দেশ তাদের মর্জি মতো চলার আদেশ দেবে ভারতীয়দের।’

কংগ্রেস এক্স হ্যান্ডেলে আরও লিখেছে, ‘এটাই হচ্ছে সাহস। এটাই ছিল ভারতের জন্য রুখে দাঁড়ানো আর দেশের মর্যাদার সঙ্গে সমঝোতা না করা।’

কংগ্রেসসহ কিছু নেটিজেন  বিকাশ দিব্যকীর্তি নামে এক শিক্ষকের একটি পুরোনো ভিডিও শেয়ার করছেন।

ওই ভিডিওতে বিকাশ দিব্যকীর্তি বলছেন, ‘একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েই পাকিস্তানকে দুই টুকরো করে দিয়েছেন। অন্য লোকেরা বলতে থাকে যে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে দেব। তিনি কিন্তু কথা বলেননি, কাজটা করে দিয়েছিলেন।’

তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, ১৯৭১ সালের সঙ্গে ২০২৫ সালের তুলনা করা ঠিক নয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পর যখন বাংলাদেশ গঠিত হয়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল, কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের যত ক্ষমতা ছিল বর্তমানের রাশিয়ার তত ক্ষমতা নেই। একদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন ভারতকে সমর্থন করত। অন্যদিকে, পাকিস্তানও তখন পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠেনি।

রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী ২০ মিনিটের মধ্যেই অধৈয্য হয়ে পড়েছিলেন
রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী ২০ মিনিটের মধ্যেই অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন

সামাজিক মাধ্যমে যা লেখা হচ্ছে

কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে এক্স হ্যান্ডেলে যা লিখেছে, তার বাইরেও কংগ্রেসের পরিচিত নেতারাও নিজেদের পেইজে ইন্দিরা গান্ধী ও ৭১-এর যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলছেন।

কংগ্রেস নেতা ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল লিখেছেন, ‘যতক্ষণ না টুকরো করেছেন, ততক্ষণ ছাড়েননি।’ 

তিনি পাকিস্তানকে দুই টুকরো করা এবং নতুন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

সাংবাদিক রোহিনী সিং এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘ভোটে লড়া আর যুদ্ধ করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এমনিই কেউ ইন্দিরা গান্ধী হয়ে ওঠে না।’

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চিঠি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে এই চিঠি লিখেছিলেন। এর চার দিন পর পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে।’

কংগ্রেস নেতা এবং কংগ্রেস সমর্থকদের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যেমন ইন্দিরা গান্ধী ও ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের কথা লেখা হচ্ছে, তেমনই আবার বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবিয়াও বিষয়টি নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল পাক সেনার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। তবে এরপরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সিমলা চুক্তি চূড়ান্ত হয়। ভারত কোনো কৌশলগত লাভ ছাড়াই ৯৯ হাজার যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল। আবার পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর মুক্ত করানোও চেষ্টা করা হয়নি বা আনুষ্ঠানিকভাবে সীমানা নির্ধারণও করা হয়নি। যুদ্ধের জন্য বা ভারতের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া উদ্বাস্তু সংকটের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণও আরোপও করা হয়নি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সুবিধা অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরা বন্ধ করুন।’

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ উদ্বাস্তু ভারতে চলে এসেছিলেন, সেই প্রসঙ্গ তোলেনই নি মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

ইন্দিরা গান্ধী, ১৯৭১ ও রিচার্ড নিক্সনের পুরো ঘটনাটা কি?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ইন্দিরা গান্ধীর দূরত্বের কথা কারও কাছেই গোপন ছিল না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন ১৯৬৭ সালে দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইন্দিরা গান্ধী এতটাই বিরক্ত হয়েছিলেন যে  রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে থাকা ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আর কতক্ষণ এই লোকটাকে সহ্য করতে হবে?"

ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে লেখা বইগুলোতে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

১৯৭১ সালেও দুজনের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা অব্যাহত ছিল।

পূর্ব পাকিস্তানের নৃশংসতার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে ইন্দিরা গান্ধী করতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ইন্দিরা গান্ধীকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিলেন বৈঠকের আগে।

হোয়াইট হাউসে স্বাগত ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিহারের বন্যাদুর্গতদের প্রতি সহানুভূতি দেখালেও পূর্ব পাকিস্তানের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেননি।

বিবিসির রেহান ফজল কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মহারাজ কৃষ্ণ রসগোত্রার সঙ্গে  এই ব্যাপারে কথা বলেছিলেন।

মহারাজ কৃষ্ণ রসগোত্রা বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘আমি তখন সেখানে ছিলাম। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উদ্দেশ্য ছিল ইন্দিরা গান্ধীকে তার জায়গাটা দেখিয়ে দেওয়া, তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে অপমান করতে চেয়েছিলেন। আলোচনা প্রথম থেকেই ঠিকমতো চলছিল না।’

তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে ভারতে আসা এক কোটি বাঙালি উদ্বাস্তু আমাদের ওপরে একটা ভার হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং শিবিরগুলোতে অনাহারে তারা মারা যাচ্ছিলেন, তাদের সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটা কথাও বলেননি।’

রসগোত্রা বলেন, ওই  আচরণটা ইন্দিরা গান্ধী উপেক্ষা করেছিলেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে যা বলার ছিল, সেটা বলেও দিয়েছিলেন।

‘মূল কথা ছিল, পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যা চলছে তা আপনারা বন্ধ করুন এবং যেসব শরণার্থী আমাদের দেশে এসেছে তারা পাকিস্তানে ফিরে যাবে। আমাদের দেশে তাদের জায়গা নেই – এটাই বলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী,’ জানিয়েছিলেন মহারাজ কৃষ্ণ রসগোত্রা।

মার্কিন নৌবহর এবং ৭১-এর যুদ্ধ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে তাদের নৌবহর পাঠায়।

ইন্দিরা গান্ধী পরে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফ্ল্যাচ্চিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমেরিকানরা যদি একটি গুলিও ছুঁড়ত, অথবা বঙ্গোপসাগরে অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কিছু করত তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারত। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, এই ভয়টা একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি।’

অ্যাডমিরাল এসএম নন্দা তার আত্মজীবনী ‘দ্য ম্যান হু বম্বড করাচী’তে লিখেছেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহতেই একটি সোভিয়েত ডেস্ট্রয়ার ও মাইনসুইপার মালাক্কা উপসাগর থেকে এই অঞ্চলে পৌঁছিয়ে গিয়েছিল। আমেরিকার নৌবহরটি ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওখান থেকে না চলে যাওয়া পর্যন্ত সেটিকে অনুসরণ করেছিল সোভিয়েত নৌ বহর।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!