দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের প্রতিক্রিয়ামূলক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। কমেন্ট করার পাশাপাশি তিনি নিজেও স্ট্যাটাসও দেন ফেসবুকে।
আইন উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আওয়ামী আমলে ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছে মূলত ফাঁসির দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনের ডিকটেশনে, অভিযুক্তরা দোষী ছিল নাকি ছিল না, কিংবা দোষী হলে কতটুকু দণ্ড তাদের প্রাপ্য- সেটি নির্ধারণে ডিউ প্রসেস ও ন্যায়বিচারের শর্তগুলো মেনে নয়। কাজেই সেই বিচার অপরাধী সাব্যস্তরা আসলে মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী ছিল নাকি তারা সেটি ছিল না- তা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হয়েছিল।’
এর আগে আনু মুহাম্মদ তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আসিফ নজরুল ভুল বলেছেন। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল দুঃশাসন, নির্বাচন তামাশায় পরিণত করে জবরদস্তি ক্ষমতা ধরে রাখা, ভয়াবহ দমনপীড়ন, অভূতপূর্ব মাত্রায় দুর্নীতি, দখল লুণ্ঠন এবং সম্পদ পাচার, সীমাহীন ঔদ্ধত্য এবং সবশেষে নির্বিচার নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও জুলুমের বিরুদ্ধে। এরকম শাসনব্যবস্থার অবসান এবং বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে। “আদেশক্রমে বিচার ব্যবস্থা” পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ জীবন দেয় নাই, ৭১ এর ঘাতক দালাল-মবতন্ত্র-নারী এবং ভিন্নমত বিদ্বেষী হিংস্র গোষ্ঠী-চাঁদাবাজ-দখলদার পুনর্বাসন বা তৈরির জন্য গণঅভ্যুত্থান হয় নাই। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ, যাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্য লড়াই করেছেন, শ্রেণি-লিঙ্গ-জাতি-ধর্মীয় নিপীড়ন ও বৈষম্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার চিন্তা ও লড়াইয়ে দীর্ঘদিন থেকে যুক্ত আছেন। এই গণঅভ্যুত্থানকে আসিফ যেভাবে উপস্থিত করেছেন তা ইতিহাসের চরম বিকৃতি এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণ, শক্তি, শ্রম আর প্রত্যাশার ওপর দাঁড়ানো একটি বড় অর্জনকে কলঙ্কিত করা। আমি এর প্রতিবাদ জানাই।’
বিপরীতে আসিফ লজরুল লেখেন, ‘আনু ভাইকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি এখানে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
প্রথমত: তিনি যেসব কারণে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে বলেছেন তাতো আমিও বলি, এসব লক্ষ্যেই গত ১৫ বছর আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। গণঅভ্যুত্থানের পর যতটুকু লিখেছি, একটু সহজ ভাষায় ঠিক এসব লক্ষ্যের কথাই আমি লিখেছি।
কিন্তু আনু ভাই, আমার পোস্টটা তো গণঅভ্যুত্থানের সার্বিক লক্ষ্য নিয়ে লেখা নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের বিষয় নিয়ে। আওয়ামী আমলে সেখানে কীভাবে বিচার হয়েছে তা তিনি নিশ্চয়ই জানেন।
তিনি আরও লেখেন, সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হয়েছে বলেই জামাত নেতা জনাব আজাহার মুক্তি পেয়েছেন। গত দশ মাসের আরও বহু রায়ের মতো এই রায়ও আওয়ামী আমলের বিচারের ঘাটতিকে উন্মোচন করেছে। জুলাই গনঅভ্যূত্থান না হলে এই সুযোগ সৃষ্টি হতো না। কিন্তু তার মানে এটি নয় যে জুলাই গনঅভ্যুত্থানের একমাত্র লক্ষ ছিল এটি।
দ্বিতীয়ত: কোনো প্রমাণ ছাড়া স্বনামধন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের এই বিচারকে আনু ভাই ‘আদেশক্রমে বিচারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ বলে অভিহিত করেছেন। আনু ভাই আমি আপনাকে নিশ্চিত করি, এখানে সরকারের কারো আদেশ ছিল না। এ ধরনের ঢালাও কথা না বলে আপনি বা অন্য কেউ রায়টির পর্যালোচনা করে বের করুন কোথায় এখানে আদেশের আলামত রয়েছে, কোথায় অবিচার হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :