ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫

অন্তর্বর্তীতে আজ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৬:১২ এএম
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ৫৪ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে দাঁড়িয়ে জাতির উদ্দেশে ঘোষিত হতে যাচ্ছে দেশের জাতীয় বাজেট। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত হতে যাওয়া এই বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো আগের বছরের তুলনায় কম বাজেট।

এর আগে (২০২৪-২৫) সালের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার যেমন একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতির চাপ- সবমিলিয়ে এ বাজেট হচ্ছে এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের একটি ‘রক্ষণশীল বাজেট’।

এবারের বাজেট উপস্থাপন করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, যিনি দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে সুপরিচিত। এটি তার প্রথম বাজেট এবং এটি সংসদে নয়, সরাসরি জাতির উদ্দেশে প্রচারিত হবে বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে। সব বেসরকারি টিভি চ্যানেলকেও এই সম্প্রচার ‘ফিড’ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি মেটাতে নেওয়া হবে ঋণ, যার একটা বড় অংশ আসবে দেশীয় ব্যাংক ও বন্ড মার্কেট থেকে।

এর বাইরে  ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে, যার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে অবকাঠামো ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে।

অর্থনীতি নিয়ে বাজেট প্রস্তুতকারকদের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির চাপ। বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে থাকলেও বাজেটে তা ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বৈশ্বিক পণ্যমূল্য, ডলারের সংকট, রিজার্ভ হ্রাস এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এই লক্ষ্যমাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

তদুপরি, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে  ৫.৫ শতাংশ, যদিও গত বছর তা ছিল মাত্র ৩.৯৭ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ ও শিল্পখাতে বড় ধরনের পুনরুদ্ধার প্রয়োজন।

ব্যাংক খাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা অনেকের চোখে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সুর স্পষ্ট করছে। বিশেষত যেসব দুর্বল বেসরকারি ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হতে পারে, তাদের জন্যই মূলত এই বরাদ্দ।

এরই অংশ হিসেবে ৯ মে জারি করা হয়েছে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ —যা রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বেইলআউট’ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া প্রশমনের লক্ষ্যেই হয়তো আমানতকারীদের ওপর আবগারি শুল্কের নতুন কাঠামো চালু হচ্ছে। আগে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত শুল্কমুক্ত থাকলেও এবার তা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্কমুক্ত করা হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ থেকে শুরু করে ৫ কোটি টাকার ওপরে পর্যন্ত আমানতের জন্য শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর ফলে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হলেও, উচ্চ আমানতকারীরা বাড়তি চাপে পড়বেন।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার (১/১১-এর পরবর্তী) আমলে এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংসদের বাইরে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। ঠিক ১৭ বছর পর আবারও ইতিহাস ফিরল- একটা  ‘অরাজনৈতিক সরকার’ বাজেট ঘোষণা করছে সংসদবিহীন পটভূমিতে।

তবে এবার একটি নতুন প্রক্রিয়া যোগ হয়েছে- নাগরিক মতামতের ভিত্তিতে বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। ২৩ জুনের পর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে বাজেট কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অনেকের আস্থা তৈরি হয়নি এখনো। ফলে বাজেটের বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ-আস্থা পুনরুদ্ধারে এই সরকার কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়েও রয়েছে বিনিয়োগকারীদের ও উন্নয়ন সহযোগীদের গভীর পর্যবেক্ষণ।