রাত পোহালেই পলিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্ত সামনে রেখে জমে উঠেছে দেশের কোরবানির পশুর হাটগুলো। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ছোট-বড় প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হাটে এখন শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা তুঙ্গে।
ঈদ ঘিরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত এসব হাট। খামারি ও পাইকাররা পশু নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন হাটে হাটে। গ্রামাঞ্চলেও চলছে ব্যাপক বেচাবিক্রি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা, এবারের কোরবানির পশুর বাণিজ্য ছাড়িয়ে যেতে পারে এক লাখ কোটি টাকা।
রাজধানীর গাবতলী ও তেজগাঁওয়ের বড় পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে জমজমাট বিক্রি। শুক্রবার (৬ জুন) জুমার নামাজ পর্যন্ত ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। অনেকেই নামাজের পর আরও বেশি ক্রেতা আসার আশা করছেন। হাটে ব্যাপারীরা ব্যস্ত গরু গোছগাছ, পরিচর্যা ও দরদামে।
তেজগাঁও হাটের এক ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ জানান, ৩০ মে থেকে তিনি হাটে আছেন। ছোট গরুগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে এবং দামও ভালো পেয়েছেন। এখন শুধু বড় দুটি গরু অবিক্রীত রয়েছে। আশা করছেন, ঈদের আগেই সেগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।
তেজগাঁও হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির জানান, বিক্রিবাটা ভালো চলছে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ধারণা করা হচ্ছে, রাতভর এই বেচাকেনা চলবে।
ঢাকার বাইরের হাটগুলোতেও একই চিত্র। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের হাট এবং দামকুড়া হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে শেষ মুহূর্তের চাঙাভাব লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় পশু ব্যাপারী আইনাল হোসেন জানান, গত কয়েকদিন বিক্রি কম হলেও এখন বেচাকেনা বেড়েছে। বিশেষ করে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। তবে বড় গরুর দাম কিছুটা কমে গেছে বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় কেউ খালি হাতে ফিরবেন না। মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে বিক্রি। সব পশুই কোনো না কোনোভাবে বিক্রি হয়ে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোরবানির জন্য এবার দেশে প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। এর মধ্যে কোরবানির জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার। ফলে প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে, যা আগামী বছর কোরবানির বাজারে সরবরাহের জন্য কাজে লাগবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান জানান, কোরবানির ছয় মাস আগেই তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এ বছর প্রায় ৮২ হাজার খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রশিক্ষিত করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৫ জন নিয়মিত কসাই ও ২১ হাজার মৌসুমি কসাইকেও। দেশের প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন, ‘সব পক্ষের সহযোগিতায় এবার আগের যেকোনো বছরের তুলনায় আরও সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে কোরবানির পশুর বাজার পরিচালিত হচ্ছে।’
সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আশা করা যাচ্ছে, এক লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে এবারের কোরবানির পশুর বাজার হতে পারে দেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় রকমের প্রণোদনা।
আপনার মতামত লিখুন :