ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতের মধ্যে তেহরানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানো হবে। এতে সহযোগিতা করতে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান।
তবে বাংলাদেশিদের ফেরার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি ইসলামাবাদ। তেহরান ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাকিস্তান দূতাবাসে কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ওই চিঠিতে প্রাথমিকভাবে ৯০ বাংলাদেশির তালিকাও হস্তান্তর করা হয়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন খান গত ১৮ জুন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন।
পাকিস্তানের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি রয়েছে। তবে ইরানে ইন্টারনেট সঙ্কট থাকায় অনলাইনে ভিসা আবেদন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিশেষ বিবেচনায় ভিসার ব্যবস্থা বা বিকল্প পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তেহরানের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় গুরুত্ব দিচ্ছে দূতাবাস। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার পাকিস্তান দূতাবাসে প্রাথমিকভাবে ৯০ বাংলাদেশির একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে। পাশাপাশি তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সীমান্ত অতিক্রম করাতে ইরান সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে ১০০ জনের মতো দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকের মতো তেহরান থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, অন্য কূটনীতিকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্য মিলিয়ে ৪০ জন নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্থলপথে ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে করাচি-দুবাই হয়ে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার।
ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যারা বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসাধারী, তাদের ফেরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে অবৈধদের নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে।
চলমান পরিস্থিতিতে ইরানের আকাশপথ বন্ধ রয়েছে। ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে হলে স্থলপথে ফেরাতে হবে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান ও তুরস্ক হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানোর সুযোগ রয়েছে। এটি করতে গেলে প্রথমে ইরান সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তান বা তুরস্কে যেতে হবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তুরস্ক সহযোগিতার হাত বাড়বে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তবে বাংলাদেশিদের পাকিস্তান হয়ে ফেরানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে স্থলপথে পাকিস্তানে যেতে প্রথমে ইরান সীমান্ত অতিক্রম করতে হবে। এরপর বেলুচিস্তান সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে হবে। পাকিস্তান থেকে ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় করাচি-দুবাই হয়ে বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফেরাতে চায় সরকার।
পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ইতিমধ্যে তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে বিকল্প সীমান্তপথ খোলা রেখে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন।
তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সবমিলিয়ে তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশি রয়েছেন।
ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সে দেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন।
এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। ২০০-এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন।
এ ছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সবসময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ফেরত আনার প্রথম ধাপে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী, বৈধ ভিসাধারী ও দূতাবাসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকা বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :