ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ইমার্জেন্সি টেলিকম রিসপন্স সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১১:৩০ পিএম
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ছবি- সংগৃহীত

দুর্যোগকালীন টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দের অংশগ্রহণে দুর্যোগকালীন উদ্ভূত সমস্যাসমূহ, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো সুরক্ষায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে আন্ত:সমন্বয় এবং দুর্যোগ মোকাবলোয় একটি টেকসই নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।

এ সময় বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ, দূর্যোগকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাট , নেটওয়ার্ক ডাউন, অপটিক্যাল ফাইবার ও মাইক্রোওয়েভ লিংকের ক্ষতি, কল ড্রপ ও কল ব্লক হওয়া, ডাটা সেন্টার, ব্রডব্যান্ড ও টাওয়ার সংযোগ বিঘ্নিত হওয়া, টেকনিশিয়ানদের দুর্গম এলাকায় যাতায়াত জটিলতা, ব্যাকআপ জেনারেটর পরিচালনায় ফুয়েল অপ্রাপ্তি, অ্যামেচার রেডিও বা বিকল্প টেলিযোগাযোগ মাধ্যমের অপ্রতুলতাসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়াবলী উপস্থাপন করেন।

মোবাইল অপারেটর ও ন্যাশনওয়াইড টেকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) এর প্রতিনিধিরা জানান, নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিতে তারা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ওপর নির্ভরশীল। তাই দুর্যোগের পূর্বে বিদ্যুৎ সঞ্চালনা ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট  সংস্থাসমূহের প্রাক-প্রস্তুতি গ্রহণ এবং দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় কমিয়ে নিয়ে আসা, একটা কার্যকরী কমিটি গঠন এবং টেলিকম সেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। 

এ সভায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, দুর্যোগে টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি স্থানান্তর অনেকটাই দূরহ হয়ে পড়ে। স্যাটেলাইট কোম্পানি দুর্যোগ এলাকায় ভিস্যাট ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করে থাকে।

এ ছাড়া, সরকারের পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানচিত্র অনুসরণ করে উক্ত এলাকায় স্থায়ীভাবে জেনারেটর, সোলার ও ভিস্যাট স্থাপন করা হলে টেলিযোগাযোগ কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করা যাবে জানান তিনি। 

টাওয়ার কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় টাওয়ার সাইটে স্থায়ী জেনারেটর রাখা ও কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা নেই , তাই   দেশের নির্দিষ্ট টাওয়ার সাইটে স্থায়ী জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখার জন্য বিটিআরসি কতৃক একটি নীতিমালা জারি করা এবং দুর্যোগকালীন এলাকাকে রেড-ইয়েলো-গ্রিন অনুযায়ী বিভাজন করা হলে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ এলাকাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। 

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিনিধি উল্লেখ করেন যে, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের চারপাশে গাছপালা থাকে, তাই পূর্ব সতর্কতার অংশ হিসেবে সংযোগ বন্ধ করতে হয়। উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগ সহনশীল বৈদ্যুতিক খুটি নির্মাণে বিদ্যমান ডিজাইন পরিবর্তন করে নতুন ইনসুলেটর স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া, দুর্যোগকালীন  টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে  বিদ্যুৎ সঞ্চালনের প্রতিটি ধাপ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে যাচাইয়ের মাধ্যমে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক জানান যে, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে সুপারিশমালা পাওয়া গেলে তা পাঁচ বছর মেয়াদী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করা যাবে।

এ সময় সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ (অব.) বলেন, প্রতেক অপারেটর এর নেটওয়ার্ক অবকাঠামো সক্ষমতা ভিন্ন রকম। তাই এ বিষয়ে অপারেটরদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে কাজ করতে হবে। দুর্যোকালীন সমস্যাগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ধাপে ধাপে কার্যক্রম গ্রহণ এবং আন্ত: সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য শেয়ারিং ও দুর্যোগ সংক্রান্ত যেকোনো পরিকল্পনায় টেলিযোগাযোগকে খাতকে অন্তর্ভূক্ত করার আহবান জানান তিনি।

এ ছাড়া আরও একাধিক সভার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়াদি আলোচনাপূর্বক এ সংক্রান্ত একটি টেকসই নীতিমালা প্রণয়ন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড, আবহাওয়া অধিদপ্তর, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক অপারেটর, টাওয়ার শেয়ারিং কোম্পানি , ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।