রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের একদিন পর মঙ্গলবার সকাল থেকে বিধ্বস্ত ভবনের সামনে ভিড় করেন বহু অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার (২১ জুলাই) দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তা শিথিল করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই সিআইডির একটি দল বিধ্বস্ত ভবনের বিভিন্ন কক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ শুরু করে। তাদের সঙ্গে বিমান বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২টার দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে স্কুলের স্বেচ্ছাসেবকরা ভবনটি ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে রাখেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দোতলা এই ভবনে ১২টি শ্রেণি কক্ষ ছিল। ওই শ্রেণি কক্ষে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনুষ্ঠিত হতো। প্রতি ক্লাসে গড়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস করত।
বিমানটি যে ভবনে আছড়ে পড়ে সেটি ছিল একটি দুই তলা শ্রেণিকক্ষ ভবন। নিচতলার মাটি ঘেঁষে বিমানটি সোজা ভবনের মাঝ বরাবর আঘাত করে। ফলে নিচতলার দুই পাশের কক্ষগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাইলস্টোন স্কুলের প্রভাষক মো. রেজাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দোতলা এই ভবনের প্রতিটি কক্ষে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করতেন। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো এখানে। বিমানটি নিচতলায় আঘাত করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচতলার শিক্ষার্থীরাই।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত ক্লাস চলাকালে ভবনটিতে ২০০ থেকে ২২০ জন শিক্ষার্থী থাকেন। দুর্ঘটনার সময় টিফিনের বিরতি চলছিল, কেউ কেউ বাসার উদ্দেশেও রওনা দিয়েছিলেন। ফলে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম হতে পারে।’
এখন পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারিভাবে আহত ও নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়েছেন এবং কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনাস্থলে আসা অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দ্রুত আহত ও নিহতদের নাম প্রকাশ এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের চত্বরের ভেতরে আছড়ে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন।
মঙ্গলবার আইএসপিআর জানিয়েছে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮, নিহত নেই। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ৪৬, নিহত ১০। ঢাকা মেডিকেলে আহত ৩, নিহত ১। ঢাকা সিএমএইচে আহত ২৮, নিহত ১৬। উত্তরা লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১৩, নিহত ২। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত ৬০, নিহত ১। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত একজন, নিহত নেই।
এ ছাড়াও শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত একজন, নিহত নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত দুজন, নিহত ১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত তিনজন এবং সেখানে কোনো নিহত নেই।