উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিনকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার একটি মন্তব্যকে ঘিরে এ উত্তেজনা তৈরি হয়—যদিও পরে ক্ষমা চান হুদা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে কমিশনের ২৩তম দিনের সংলাপে এ ঘটনা ঘটে। সংলাপটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সংলাপে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের দল উচ্চকক্ষের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে চায় না। তিনি উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদের ‘অনির্বাচিত’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা নেই।’
জবাবে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন বলেন, ‘ভোটের অনুপাত অনুযায়ী উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তা জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্রতিফলন হয়।’ তিনি সালাহউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ মন্তব্য করেন।
এ সময় জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা মাইক ছাড়াই রাসিনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘২০২৩ সালে যখন আন্দোলন হচ্ছিল তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?’ এই মন্তব্যের পর উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘হুদা ভাই, এর আগেও আপনারা একজনের বক্তব্য নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তখন আমরা থামিয়েছিলাম। এখানে আমরা কে কেন এসেছি সে প্রশ্ন তুললে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কারণ আজ যদি সে প্রশ্ন করেন তাহলে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আমাকেও সে প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা সে আলোচনায় যাচ্ছি না।’
তারপর এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘তিনি (হুদা) এ কথা বলতেই পারেন না।’ এ সময় সালাহউদ্দিন তার পিঠ চাপড়ে থামতে অনুরোধ করেন। আখতার তখনো বলতে থাকেন, ‘আমরা বাচ্চাকাল থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি।’
তখন আলী রীয়াজ বলেন, ‘কারও লোকাস স্ট্যান্ডার্ড (লোকাস স্ট্যান্ডি- রাজনীতির প্রেক্ষাপটে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন কোনো কর্মকাণ্ড, নীতি বা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তখন অবস্থানের অবস্থান বোঝাতে এই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়) গুরুত্বপূর্ণ। তা নিয়ে প্রশ্ন করার দরকার নাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের লোকাস স্ট্যান্ডার্ড আছে বলেই আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’ তখন আখতার বলেন, ‘গায়ের জোরে এসব প্রশ্ন করলে তো আমরা মানব না।’ জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি তো হস্তক্ষেপ করলাম।’ আখতার তখনো বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছি। গোটা অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা মাঠে নেমে আসল, সেটার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। এটার জন্য ওনার ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, ‘হুদা ভাই, আপনি সরি বলেন।’ এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জেনায়েদ সাকী এ বিষয়ে কথা বলতে উঠে দাঁড়ালে আলী রীয়াজ তাকে অনুরোধ করে বসিয়ে দেন। এ সময় সাকী কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেও মাইক না থাকায় তা শোনা যায়নি।
এরপর সালাহউদ্দিন আহমেদ হুদাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কেউ যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকে তার জন্য সরি বলেন।’ এরপর এহসানুল হুদা মাইক নিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে চেয়েছিলাম, ২০২৩ সালে আমরা উচ্চকক্ষের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন সে প্রস্তাবটি (পিআর) কোথায় ছিল। তারপরও কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকে, আমি দুঃখিত।’
এরপরই আলী রীয়াজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঘোষণা করেন। বিরতির সময় সম্মেলন কক্ষে হুদাকে আবার আখতারের কাছে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার অনুরোধ, আমরা এটা নিয়ে আর সিন ক্রিয়েট না করি। আমার আপনাদের নিয়ে প্রশ্ন করার ইনটেনশন ছিল না।’ পরে আখতার হুদাকে জাভেদ রাসিনের সঙ্গে কোলাকুলি করিয়ে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :