সৌদি আরবের মক্কা মদিনায় এ বছর নিরাপদে পবিত্র হজ পালনের পরেও সরকারের পক্ষ থেকে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন বাংলাদেশি হাজিরা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের আন্তরিক সহযোগিতা ও নির্দেশে এবারের হজ ব্যবস্থা বিশ্বের ভালো ব্যবস্থাপনা হিসেবে রেকর্ড গড়ে নেয় বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেন, সৌদি আরবের প্রতিটি নিয়মকানুন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে পালনে বিশেষ নির্দেশনা ছিল প্রধান উপদেষ্টার। যার কারণে যথাসময়ে সৌদি আরবের নির্ধারিত হজ ফি পরিশোধ করা, মক্কা শরীফের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করা, কম খরচে হজযাত্রা নিশ্চিত করাসহ সৌদি আরবে হজ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সুচিকিৎসা প্রদানের কারনে এবার মহান আল্লাহ তায়ালার দয়ায় বাংলাদেশ হজ যাত্রায় রেকর্ড অর্জন করেছে। যার অংশীদার শুধু ধর্ম মন্ত্রণালয় নয়, পুরো ৮৭ হাজার ১০০ জন হাজি সাহেবদেরও। কারণ তারাও সৌদি আরবে যথাযথ নিয়মকানুন মেনে পবিত্র হজ পালনে সচেষ্ট ছিলেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খলিদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ধর্ম মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় থেকে গত এক বছরে হজ কার্যক্রম ছাড়াও ধর্মীয় সেক্টরে মসজিদ মাদ্রাসায় অনুদান প্রদান, হাজারো মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান অব্যাহত রাখাসহ ব্যাপক ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক কোনো চাপ না থাকার কারণে সরকারের যথাযথ নিয়ম পালন করে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রচলিত সেবাসমূহ জনমানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ১০ (দশ) মাসে সংস্কার ও অর্জিত কার্যক্রমসমূহের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ বছর তথা চলতি ২০২৫ সালের হজ প্যাকেজের মূল্য ২০২৪ সালের চেয়ে ৭৩ হাজার টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়। হজ কার্যক্রম সার্বিক দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য সফলতার কারণে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধান উপদেষ্টা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এ বছর ২০২৫ সালের হজে তিনটি নতুন সেবার উদ্ভাবন করা হয়। তা হলো, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপ চালুকরণ, মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা প্রদান ও হজ প্রি-পেইড কার্ড হজ যাত্রীদের হাতে হাতে পৌঁছে দেওয়া।
এ ছাড়া সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সীমিত জনবলের মাধ্যমে হজ কার্যক্রম সম্পাদন করে। রাজস্ব খাতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২৯ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে রাজস্ব খাতে ৩৬টি পদ সৃজনের কার্যক্রম গ্রহণ এখন অর্থ বিভাগের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ছোট ক্যাটাগরি হতে মধ্যম ক্যাটাগরিতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ সচিব কমিটির সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দাপ্তরিক কার্যক্রমে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে ২৬৩ জন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে এ বছর ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৯৬৪ টি মসজিদে ১৭,১৬.৮৫ লাখ টাকা, ১০৪৩টি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ৫,৮৩.১৫ লাখ এবং ৭৩৩টি ঈদগাহ ও কবরস্থানে ৩,৯৭.৫০ লাখ টাকা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৩০৭টি হিন্দু মন্দিরের জন্য ১ কোটি ৪৩.৭০ লাখ ও ৫৭টি শ্মশানের জন্য ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ১১২টি প্যাগোডায় ৫৬ লাখ এবং ২৯টি বৌদ্ধ শ্মশানে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ২৯টি গীর্জায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১টি সেমিট্রিতে ৫০ লাখ টাকা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
দুস্থদের জীবন-মান উন্নয়নে ৩ হাজার ১৪০ জন দুস্থকে ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি ২৪ মে ২০২৫ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং বয়স্ক শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৭৬ হাজার ৬৭০ জন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিক্ষিত নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে।
নেপালের লুম্বিনিতে বাংলাদেশ বৌদ্ধ মঠ কমপ্লেক্স নির্মাণের একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮.০৭৬৫ কোটি টাকা। এটি বৌদ্ধ ধর্মেও অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা লুম্বিনিতে বৌদ্ধ ঐতিহ্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাকাত ফান্ডের আওতায় অসহায়, দরিদ্র ও অসুস্থদের মাঝে প্রায় ১১ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য বা অনুদান প্রদান করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৪ হাজার ৬২০ জনকে ৫ হাজার টাকা হারে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান এবং ৬০০ জনকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়।
অবহেলিত ‘হাওর এলাকায় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ইমামদের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি, নারী ও শিশু নির্যাতন, মানবপাচার, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলায় মসজিদে জুমার প্রাক খুতবায় বক্তব্য প্রদান কার্যক্রম গ্রহণ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়ের চলমান মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গত ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে ওয়াক্ফসংক্রান্ত মামলা শুনানির জন্য একটি ডেডিকেটেড বেঞ্চ স্থাপন করে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মামলা পরিচালনার জন্য ৩ (তিন) সদস্যের প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে প্রাপ্ত ৪ কোটি টাকার অনুদান দুর্গাপূজা মণ্ডপে ইএফটির মাধ্যমে বিতরণ সম্পন্ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা-২০২৪ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কল্যাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত ২ কোটি টাকা অনুদান বিতরণ করা হয়। শুভ বড়দিন উৎসব উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল হতে দেশের প্রায় ৫৪টি জেলায় চার্চ ও উপাসনালয়ে ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
প্রায় সতেরো হাজার ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী ও পরিচালনা কমিটির মেয়াদসংক্রান্ত সেবা সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল থেকে একটি অটোমেটেড সিস্টেমে নেওয়ার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিস্টেম চালু হওয়ার পর এ-সংক্রান্ত সেবা অনলাইনে প্রদান করা সম্ভব হবে এবং বিপুলসংখ্যক ওয়াক্ফ সম্পত্তির মোতাওয়াল্লী ও কমিটির মেয়াদ সংশ্লিষ্ট তথ্য মনিটরিং সহজ করা হবে। হজ অফিস, ঢাকাকে অধিদপ্তরে উন্নীতকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।