বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে চারটি তামাকবিরোধী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ১০ হাজার যুব প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) এই আবেদনটি অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয় এবং এর অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টাসহ আরও চারজন উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে।
আয়োজক সংগঠন নারী মৈত্রী, ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওর (ডর্প), ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এই আবেদন জমা দেয়। আবেদনে স্বাক্ষরকারীরা ঢাকার বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যারা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে এই দাবিগুলো তুলে ধরেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে (সংশোধিত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে— পাবলিক প্লেসে ‘স্মোকিং জোন’ নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করা, ই-সিগারেট থেকে তরুণদের সুরক্ষা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবার্তা ৯০ শতাংশ করা।
এ বিষয়ে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং এর ৫.৩ ধারা বাস্তবায়নের গাইডলাইনে সম্মতি দেয়, যেখানে তামাক কোম্পানির স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে। সরকারের তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক এই চুক্তির লঙ্ঘন। আমরা এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।’
ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওর (ডর্প)-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীটি তামাক কোম্পানি ও সরকারের মধ্যে এক প্রকার দর কষাকষিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তরুণরা সকল অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ তাদের এই দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।’
তামাকবিরোধী যুব প্রতিনিধি নাইমুর রহমান ইমন বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া, ধূমপান না করেও ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এই ভয়াবহ বাস্তবতা মোকাবেলায় আইন সংশোধন অত্যন্ত জরুরি।’
আয়োজকরা মনে করেন, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো পাস হলে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একটি তামাকমুক্ত সুস্থ জাতি গঠনের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত এই খসড়াটি দ্রুত পাস করা এখন সময়ের দাবি বলে তারা উল্লেখ করেন।