ঢাকা রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫

‘ইগো’র কারণে ১১ মাসে ১২ সংঘর্ষে ঢাকার তিন কলেজ 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১২:৫২ পিএম
ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের লোগো । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

‘ইগো’র কারণে রাজধানীর স্বনামধন্য তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা গত ১১ মাসে অন্তত ১২ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও পথচারী আহত হয়েছেন। 

সংঘর্ষের ধরন ছিল ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, কলেজের আশপাশের স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর।

তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই সংঘাত ঘটেছে। প্রথম ঘটনায় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকার সড়কে মারমুখী অবস্থান নেন। ১৯ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়ায়। পরদিন দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩৭ জন আহত হন। ২০২৪ সালের বিভিন্ন মাসে এসব সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে, ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে বিশেষ করে কয়েক দফায় মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।

ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংঘর্ষের মূল কারণ প্রাথমিকভাবে তুচ্ছ। একজন বা দুজন শিক্ষার্থীকে অন্য কলেজের শিক্ষার্থী ক্ষ্যাপিয়ে তুললে, তা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে গিয়ে বড় সংঘর্ষের জন্ম দেয়। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে সাধারণ অশান্তি ও হেনস্তার প্রতিশোধ নিতে রাস্তায় নামেন। এতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর ও যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। জড়িতদের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থী সংঘর্ষ বাধালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো অনুরোধ বা মধ্যস্থতা পুলিশের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

শিক্ষকরা বলছেন, একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশি সংঘর্ষে জড়ায়। বয়স কম, আবেগ প্রবল, আর ছোটখাটো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ. ক. ম. রফিকুল আলম জানান, শিক্ষার্থীদের মাইন্ড সেটআপ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্লাসে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। পরিবারকেও বিষয়টি জানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পুনরায় সংঘর্ষে জড়ালে তাদের টিসি দেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তির সুযোগ শেষ হবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিটি কলেজে ভিজিল্যান্স টিম রয়েছে। তারা কলেজ এলাকা চত্বরে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছেন। যেকোনো হুমকির ক্ষেত্রে তা সরাসরি পুলিশকে জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি তিন কলেজের শিক্ষকরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তথ্য আদান-প্রদান করছেন, যাতে সংঘর্ষের আগেই সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। চার মাসের এই সমন্বিত উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি কমেছে।

তবে শিক্ষক ও প্রশাসন মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে। সঠিক মনোভাব গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষক, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, পড়াশোনা করতে এসে কেউ মারামারি করতে পারবে না। যারা সংঘর্ষে জড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিমত অনুযায়ী, এই সংঘর্ষের সমস্যার সমাধান শুধু কঠোর ব্যবস্থা নয়; শিক্ষার্থীদের মানসিক পরামর্শ, কাউন্সেলিং এবং সহিংস প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূর করার কার্যকর পরিকল্পনা প্রয়োজন।