অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই কাঠামো চলতি মেয়াদেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে এবং ২০২৬ সালের শুরু থেকে কার্যকর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন কাঠামোয় শুধু মূল বেতন নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ভাতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ লক্ষ্যে গত ২৪ জুলাই গঠিত হয় জাতীয় পে কমিশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান।
কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেবে। এরপর চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে।
নতুন কাঠামোর প্রধান পরিবর্তনসমূহ
বেতন বৃদ্ধি- নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি আসছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে মেধাবীরা সরকারি সেবায় আগ্রহী হন।
চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি- বর্তমানে কর্মচারীরা মাসে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর পাশাপাশি অবসরোত্তর সুবিধাও যুক্ত করার প্রস্তা দেবে।
শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি- কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষাব্যয় বহনে সহায়তা দিতে শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর সুপারিশ থাকবে, যাতে পরিবারিক অর্থনৈতিক চাপ কমে।
বেতন অনুপাত পুনর্নির্ধারণ- বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত ১০:১। নতুন কাঠামোয় তা ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে বৈষম্য কমবে এবং ন্যায়সঙ্গত বেতন কাঠামো গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড- কর্মচারী সংগঠনগুলো টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এটি চালু হলে দীর্ঘদিন পদোন্নতি না পাওয়া কর্মচারীরাও নিয়মিত বেতনবৃদ্ধির সুযোগ পাবেন।
কমিশনের অগ্রগতি ও মতামত সংগ্রহ- জাতীয় পে কমিশন ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম সভা করেছে। ১ অক্টোবর থেকে কমিশনের ওয়েবসাইটে paycommission2025.gov.bd কর্মচারীদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। সেখানে ৩২টি প্রশ্নের মাধ্যমে বেতন-ভাতা, ব্যয় ও প্রত্যাশা বিষয়ে মতামত দেওয়া যাবে।
বিভিন্ন স্তরের মতামত
১. নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা মনে করছেন, সর্বনিম্ন বেতন বাড়ানো জরুরি। তাদের প্রস্তাব- সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক।
২. উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চান, অনুপাত ১০:১ বহাল রাখা হোক, যাতে উচ্চপদে থাকা কর্মীদের বেতন তুলনামূলক কমে না যায়।
৩. অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু বেতন বাড়ালেই হবে না- চিকিৎসা, শিক্ষা ও অবসর-পরবর্তী সুবিধা বাড়াতে হবে। তবে ব্যয় বাড়বে, তাই রাজস্ব আয়ের পথও সম্প্রসারণ করতে হবে।