ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

জাতিসংঘে আ.লীগের চিঠি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি- সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে জাতিসংঘের সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এই চিঠির কোনো প্রভাব পড়বে না, জাতিসংঘকে এমন চিঠি দিয়ে কোনো লাভ নেই।’

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। দেশ এখন নির্বাচনের পথে, সংবিধান অনুযায়ী সব কিছুই চলছে। এই ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ আসলে শুধু প্রচারণার অংশ।’ 

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের চিঠি কূটনৈতিকভাবে কোনো গুরুত্ব পাবে না। জাতিসংঘ একটি নিরপেক্ষ সংস্থা; তারা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাতে পক্ষ নেয় না। আর বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে, কোনো বিদেশি সংস্থার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি মূলত একটি রাজনৈতিক প্রচারণা। ক্ষমতাচ্যুত দলগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান জানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবে এসব চিঠি কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেশের নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে আর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলগুলোকে স্বাগত জানানো হবে তবে কোনো পক্ষপাতদুষ্ট বা বিতর্কিত সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণ যেন নিজের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এ নিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।’

এর আগে গত শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর একটি চিঠি পাঠায় আওয়ামী লীগ। সেখানে দলটি দাবি করে, বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তাই জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির নির্বাচনি সহায়তা, বিশেষ করে ‘ব্যালট প্রজেক্ট’ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা উচিত।

চিঠিটি দলের পক্ষ থেকে পাঠান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির উচিত হবে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করা, যাতে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রাখতে হবে।’

আওয়ামী লীগের দাবি, ইউএনডিপির নির্বাচনি সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার কার্যক্রম এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করছে না। দলটির অভিযোগ, এই সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে।

দলটির মতে, জাতিসংঘ যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ নেয়, তবে তা একতরফা নির্বাচনের বৈধতা দিতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।