ঢাকা রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

চার কারণে ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২৫, ০৪:২১ পিএম
প্রতীকী ছবি

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েক দিনে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি রাজধানীর জন্য বিপদের সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে। উৎপত্তিস্থলটি ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে হওয়ায় ঝাঁকুনির তীব্রতা বেশি ছিল। এই কম্পনের কারণে শিশুসহ অন্তত ১০ জনের মৃত্যু এবং ৬ শতাধিক মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও তিনটি কম্পন রেকর্ড হয়। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ৩.৩ মাত্রার, বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে ৪.৩ এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে ৩.৭ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা এই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পকে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, ভূ-অভ্যন্তরের ফল্ট লাইন দীর্ঘ সময় ধরে চাপের মধ্যে আটকে ছিল। এখন তা নড়তে শুরু করেছে এবং শক্তি নির্গমনের প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এর ফলে আফটার শকের সম্ভাবনা বেড়েছে, যা বড় ভূমিকম্পের দিকে পথ খুলে দিতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব হাসান ঢাকা শহরের ঝুঁকি চারটি কারণে স্পষ্ট বলে মনে করেন।

প্রথমত, উৎপত্তিস্থল থেকে রাজধানীর নৈকট্য—নরসিংদীর সাব-ফল্ট ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে।

দ্বিতীয়ত, ঢাকার মাটির গঠন—শহরের নতুন অংশগুলোতে মাটি ভরাট করে তৈরি হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা আরও বাড়ে।

তৃতীয়ত, অনেক ভবন ইমারত নির্মাণ বিধি ও ডিজাইন কোড অনুসরণ করছে না।

চতুর্থত, রাজধানীর উচ্চ জনঘনত্ব—এতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি অনেক বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে ৩৯টি ভূমিকম্পের মধ্যে ২৮ শতাংশ ঢাকার ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে উৎপন্ন হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ কম্পন রাতের দিকে ঘটে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে এবং প্রাথমিক প্রস্তুতি নেই। এ কারণে প্রাণহানির সম্ভাবনা বেশি।

প্রস্তুতির দিক থেকে দেখা যায়, রাজধানীতে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণের জন্য তেজগাঁওয়ে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কাজের অগ্রগতি হয়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততা কম থাকার কারণে কার্যকর প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হচ্ছে।

দুর্যোগ ফোরামের সদস্য সচিব গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য ও প্রস্তুতির অভাব ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং স্কুল-কলেজ পর্যায়ে সচেতনতা শিখানো জরুরি।