দেশে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তামাককে চিহ্নিত করেছেন খ্যাতনামা ১৩ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, তামাকজনিত রোগ দেশে এমন এক ভয়াবহ মহামারী রূপ নিয়েছে, যা করোনাভাইরাসের তিন বছরের মৃত্যুর চেয়ে প্রায় ১৪ গুণ বেশি প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।
শুধু মৃত্যুই নয়, তামাকজনিত রোগ দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাপনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার (১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হল তামাক। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির গবেষণা অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকজনিত রোগে ভোগেন।
টোব্যাকো এটলাসের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। পাশাপাশি পরোক্ষ ধূমপানের কারণে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, আর প্রায় ৬১ হাজার শিশু রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ব্যয় ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছিল শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ব্যয়।
একই সময়ে সরকারের তামাক থেকে রাজস্ব আয় ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা তামাক ব্যবহারের কারণে হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতির অর্ধেকেরও কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা খরচ যোগাতে প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বিভ্রান্তকর ও মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে সরকারের নীতি ও পদক্ষেপকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। অনেকেই মনে করেন, আইন শক্ত করলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা দেখাচ্ছে, গত ২০ বছরে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর ধারাবাহিক বৃদ্ধির কারণে এই খাত থেকে রাজস্ব আয় ১৪ গুণ বেড়েছে। একই সময়ে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে দেশে তামাক ব্যবহার প্রায় ১৮% কমেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, আধুনিক রাষ্ট্রে রাজস্ব আয় কখনোই জনস্বাস্থ্য এবং মানুষের মৃত্যুর চেয়ে বড় বিবেচ্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা এবং একটি কার্যকর ও টেকসই তামাক কর নীতি প্রবর্তন করা জরুরি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ১৩ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, যার মধ্যে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নওজিয়া ইয়াসমীন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী সহ আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন