বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পিনাকী ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম

ফারাক্কা সমস্যা সমাধান কীভাবে হবে

পিনাকী ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম

ফারাক্কা সমস্যা সমাধান কীভাবে হবে

পিনাকী ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

ফারাক্কা বাংলাদেশের এক জ্বলন্ত সমস্যা। পদ্মায় সেতু হয়েছে কিন্তু ফারাক্কা আমাদের পদ্মাই শুকিয়ে ফেলেছে। পদ্মা নদীই আমাদের পূর্ববঙ্গের বসতি, জীবন আর জীবিকার ছিল মূল উপাদান। ফারাক্কা এই মারণ ব্যারাজের কারণে আমাদের নদীনির্ভর জীবন, ভূ প্রকৃতি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের কোনো সরকার ফারাক্কা ব্যারাজের সংকট কীভাবে ফয়সালা করা যাবে এটা নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানের পথ খুঁজেনি। একপক্ষ ভারতের কাছে আরেকটু পানির জন্য ধরনা দিয়েছে। আরেকপক্ষ ফারাক্কা ব্যারাজের অছিলায় বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতি করে গেছে, সমাধানের পথ খুঁজেনি। কিন্তু পদ্মা ক্রমাগত শুকিয়েছে, আমাদের সংকট কাটেনি। মেধা আর কৌশলের যুগপৎ প্রয়োগে আমরা যেই সমস্যা অনেক আগেই সমাধান করতে পারতাম সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছি। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবেÑ সেটা খুঁজে দেখার জন্য আমরা এই আলাপটা চারটা পর্বে ভাগ করে আলাপ করব। প্রথমত, আমরা দেখব ফারাক্কা ব্যারাজ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল এবং ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে আসলে কী করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে কি না? তৃতীয়ত, কেন ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং চতুর্থত, সমাধানের পথ। 

ফারাক্কা ব্যারাজ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছিল : ভারত সরকারের ডকুমেন্টে এখনো পর্যন্ত ফারাক্কা ব্যারাজ কেন তৈরি করা হয়েছিল সেটার কারণ হিসেবে বলা আছে, ভাগিরথি হুগলি নদী ব্যবস্থার শাসন ও নাব্য উন্নত করে কলকাতা বন্দরের সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ফারাক্কা ব্যারাজ প্রকল্পটি ডিজাইন করা হয়েছিল। এটা ভারত সরকারের অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট। কেন তারা ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরি করেছিল? আমরা পরে দেখব ভারতের এই লক্ষ্য ফারাক্কা ব্যারাজ পূরণ করতে পেরেছে কি না? তার আগে গুগল আর্থ দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে আসলে কি করা হয়। ফারাক্কা কিন্তু কোনো বাঁধ নয়, একটি ব্যারাজ। যার ওই পারে বাংলাদেশ। 

এই ব্যারাজ দিয়ে কি ভারতের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে?

না! কোনো উদ্দেশ্যই সফল হয়নি। এটা আমার কথা নয়, ইন্ডিয়ান এক্সপার্টদের কথা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরি করা হয়েছিল, ভারতের সেই পারপাস ডিফিটেড হয়েছে। কেন হয়েছে? সেটার উত্তর একটু জটিল। আমি সেই বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব না। কিন্তু উপসংহার হচ্ছে, ভারতের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার মানে, হুগলি নদীর নাব্য রক্ষা করা যায়নি এবং কলকাতা বন্দরকেও রক্ষা করা যায়নি। শুধু তাই না, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বিহারে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। সুন্দরবন ধ্বংস হয়েছে। গঙ্গায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে আর ভারতের ভূখণ্ড সাগরে নিমজ্জিত হচ্ছে। গঙ্গাসাগর দ্বীপের ৩০ কি.মি ইতোমধ্যেই সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। সেখানে ১৪টি গ্রাম ছিল। এই ১৪টি গ্রামের মানুষ নেহাতই দরিদ্র। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরা গেছিই, আপনারাও যাচ্ছেন। কেন ১৪টি গ্রাম বিলীন হলো কারণটা খুব ইন্টারেস্টিং। নদী শুধু পানি বয়ে আনে না, সঙ্গে আনে পলি। পানি যদি নদীর দেহ হয়, পলি তাহলে নদীর আত্মা বা রুহ। গঙ্গা নদী যে পলি আনত তা পদ্মা ও গঙ্গা নদীতে সমানভাবে ভাগ হয়ে দুই অববাহিকায় প্রবাহিত হতো। এই পলি সমুদ্রে গিয়ে পরে। আর সমুদ্রকে দূরে রাখে। পলি আসা কমে গেলে সমুদ্র এগিয়ে আসতে থাকে। এসে ভূমিকে গ্রাস করতে থাকে। এটা সমুদ্রের ক্ষুধা। ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে পলির বেশিরভাগ পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশে চর পরে যাচ্ছে পদ্মায় আর সমুদ্রকে ঠেকানোর মতো পলি পাচ্ছে না গঙ্গা। তাই সমুদ্র ভারতের ভূমি খেয়ে তার ক্ষুধা মেটাচ্ছে। এটা থামবে না। লেখক কল্যান রুদ্রের ‘রিভার অব দ্য গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা ডেল্টা’ বইয়ে উপসংহারে লেখা আছে, ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে যে হুগলি নদীকে বাটানো যায়নি, তার কথা। কলকাতা পোর্ট একটি শ্বেতহস্তি এবং ভেরি রং বিজনেস আইডিয়া। যে আইডিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছেন ফারাক্কা ব্যারাজ দিয়ে। 

কেন কলকাতা পোর্ট একটি ভুল আইডিয়া
এই পোর্ট স্থাপন করেছিল ব্রিটিশরা। সমুদ্র উপকূল থেকে ১২৮ কি.মি গভীরে। সেই সময় জাহাজ হতো ছোট, আধুনিক জাহাজ বিশাল। সেই জাহাজ নদীর চ্যানেলে ঢুকতে পারে না। অ্যাভারেজ সাইজের জাহাজকে বলা হয় প্যানামক্স। তার মানে যেই জাহাজ ফুল লোড হয়ে পানামা খাল দিয়ে পার হতে পারে সেই প্যানামক্স জাহাজের অর্ধেক লোড কমালেও সেটা কলকাতা পোর্টের চ্যানেলে ঢুকতে পারে না। তো এই পোর্ট দিয়ে আপনি করবেন কি? শুধু তাই না, এই পোর্টের যেই গভীরতা আছে সেটাকে মেইনট্যানেন্স করতে হলে বছরে ৪০০ কোটি রুপি খরচ করে ড্রেসিং করতে হয় এবং এই ৪০০ কোটি রুপি কলকাতা পোর্ট আয় করতে পারে না বছরে। এটা কেন্দ্রীয় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। ফারাক্কা তো কোনো লাভ দেয়নি, এটা লস। 

কেন ফারাক্কার জন্য বিহারে বন্যা হচ্ছে
নদী যখন স্বাভাবিকভাবে নিজের চলার পথ করে নিয়ে যায় তখন সে সমানভাবে পলিকে বহন করে নিয়ে যায়। আর বয়ে আনা পলির পরিমাণই নদীর গতিপথ ঠিক করে। এ কারণেই নদী এঁকেবেকে চলে। আর এই গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হলেই ঘটে বিপত্তি। কারণ নদীকে শাসন করা যায় না। নদীভাঙন হয় আর সেই পলিটা এসে নদীর পানিতে মিশে নদীর ভাটিতে এসে জমা হয়। আর এ কারণেই ফারাক্কার জন্য বিহারে বন্যা হচ্ছে। বিহারের সরকার ফারাক্কার বাঁধ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। 

ফারাক্কা সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব
আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েছেই। ভারতের কোনো লাভ হয়নি। বরং ক্ষতি শুরু হয়েছে ভারতের। ভারত চিন্তা করছে বিহারের বন্যা ঠেকাতে নেপালে জলাধার নির্মাণ করবে। এটা হবে আরেকটা রেসিপি অব ডিজাস্টার। আমি বিশেষজ্ঞ না, কিন্তু আক্কেল আছে, আপনারা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন গঙ্গার পানি হিস্যা নেওয়াটা এই ফারাক্কা সমস্যার সমাধান না। সমাধান একটাই ভারতকে বলা, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফারাক্কা বানিয়েছিলেন সেটা অর্জিত হয়নি। বরং আপনার লস হয়েছে। আরও হবে। এই একটা লস প্রজেক্ট আপনি কোন যুক্তিতে রাখবেন? ফারাক্কার যদি না থাকে তাহলে ভারতের লাভ কি? বিহারে বন্যা হবে না। গঙ্গা সাগরে আপনার ভূমিক্ষয় বন্ধ হবে। গঙ্গা অববাহিকায় লবণাক্ত কমে যাবে। বাংলাদেশে এন্টি ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট কমবে। 

তাহলে কি আমি রিকমেন্ট করছি ফারাক্কা ভেঙে দিন। না, আমি বলছি, সমসাময়িক পাঁচ বছরের জন্য ডিকমিশন করুন ফারাক্কা ব্যারাজ। মানে সব গেট খুলে রাখুন। পদ্মা আর গঙ্গা কীভাবে ন্যাচারালি রিকভার করে দেখুন। ফারাক্কা ডিকমিশনের জন্য নদী ব্যবস্থাপনা ও মানুষের জীবিকার সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ মিলে একটা কমন ফান্ড তৈরি করতে পারে। গঙ্গার পানি কমে যাওয়ায় কলকাতায় যদি পানি সরবরাহের সমস্যা হয় সেটার জন্য একটা পরিকল্পনা থাকবে। কলকাতা পোর্টের ড্রেসিংয়ের যা খরচ বাঁচবে সেটা দিয়ে পোর্টের শ্রমিক এবং পেনশনভোগীরা যেন সমস্যায় না পরে তাই তাদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। 

 

পিনাকী ভট্টাচার্যের ভিডিও থেকে অনুলিখন, ২১ আগস্ট রাতে ভিডিওটি তার অফিসিয়াল ইউটিউবে পোস্ট করেন তিনি।
 

আরবি/জেডআর

Link copied!