শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. কামরুল ইসলাম

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম

মতামত

গত শতাব্দীর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

মো. কামরুল ইসলাম

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম

মো. কামরুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

মো. কামরুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত

সঠিক নেতৃত্ব তৈরির কারিগর ছিল দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ। ডাকসু, চাকসু, রাকসু, জাকসু, শাকসু, বাকসু নির্বাচনগুলোর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের। এমনকি ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ, বরিশাল বিএম কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ, চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, খুলনার বিএল কলেজ, যশোরের এমএম কলেজসহ সারা দেশের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত করার জন্য, ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উঠে আসা অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতির হাল ধরেছে।

গত শতাব্দীর শেষ সময়গুলোর পদধ্বনি আবারও শুনতে পাচ্ছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা জুলাই আন্দোলনের ফলে প্রাপ্ত পরিবর্তনের ফল। এরমধ্যে ডাকসু, রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটা রিহার্সল বলতে পারেন। গত শতাব্দীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন সহ বেশ কিছু ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করতো। যা প্যানেল আকারে একক সংগঠন থেকে কিংবা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নির্বাচনকালীন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করতো, যা প্রতিটি ক্যাম্পাসে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতো। একটা ঈদ ঈদ ভাব থাকতো। প্রতি বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো।

এক সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্বারাও সরকার পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যেত। আশি-নব্বই দশকের ধারাবহিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরর শেষ অংক ছিল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন, যা শাকসু নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৯৭ সালে শাকসুর শেষ নির্বাচন হয়। দীর্ঘ সময় পর এসিড টেস্ট হিসেবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর পরবর্তীতে আর ডাকসুসহ অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের পথে পা বাড়ায়নি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সারা দেশের নির্বাচন কেন্দ্রীক অবকাঠামো জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যেভাবে বছরের পর বছর ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করা হয়েছে ঠিক একইভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট পরবর্তীতে সব কিছুতেই একটা পরিবর্তনের আবাস মিলছে, যা আগামীর বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির কারিগর হিসেবে খ্যাত কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সারা বছর পাঠ্যক্রম বহির্ভূত নানা বিষয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ত সময় পার করতে সহায়তা করতো।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় ছাত্রদের মাঝে মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, অনৈতিক কাজের বিশেষ করে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের আবির্ভাব ঘটে। জুলাই আন্দোলনের পরপূর্ণ ফসল আমরা ঘরে তুলতে পারি নাই শুধু মাত্র রাজনৈতিক সহনশীলতা না থাকায়। জুলাই আন্দোলনের ফলে জাতীয় রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্বের আবির্ভাব দেখতে পেয়েছি। জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে গত এক বছরে ডজন খানেক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব ঘটেছে। দেশের ভবিষ্যত রাজনীতির হালচাল তাদের উপরও নির্ভর করবে।

জুলাই আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিতে যেয়ে যেন কোনোভাবেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কিংবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ভাষা আন্দোলন আমাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষা করেছে, আর একাত্তর পাকিস্তানি হানাদের কাছ থেকে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের কৃতি সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে বিশ্বের বুকে ছাত্র জনতার বৈপ্লবিক আন্দালনে যে একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটানো সম্ভব তা সারা বিশ্বের রাষ্ট্র নায়কদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দৃঢ়চেতা মনোবল বন্দুকের নলের মুখে দাড়িয়ে আবু সাঈদ, মুগ্ধদের মতো হাজারো ছাত্র-জনতার আত্নত্যাগ ভবিষ্যত বাংলাদেশে স্বৈরাচার তৈরির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। স্যালুট জুলাই আন্দোলনের সৈনিকদের। ক্ষমতালিপ্সুদের জন্য এক কঠিনতম রেড সিগন্যাল। বাংলাদেশিরা যে বীরের জাতি, সাহসী জাতি তা বারবার প্রমাণ করেছে। মাঝে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও ডা. মিলনের মতো অনেক ছাত্র জনতা প্রাণ দিয়ে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

দেশের সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এর সংস্কৃতি গড়ে উঠুক, সঠিক নেতৃত্বের উন্মেষ ঘটুক, বিশ্বের দরবারে একটি যোগ্য জাতি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করুক এবং আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপকার হউক এ প্রত্যাশা করি।

লেখক
সাবেক জিএস, শাকসু (১৯৯৪-১৯৯৫) ও
সাবেক প্রেসিডেন্ট, সাস্ট ক্লাব লিমিটেড (২০১৯-২০২১)
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!