বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আল-জাজিরা

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

বিশ্লেষণ

সিরিয়া কি ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে?

আল-জাজিরা

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম

নেতানিয়াহু-ট্রাম্প-আল শারা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

নেতানিয়াহু-ট্রাম্প-আল শারা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

সিরিয়ায় প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হয়েছে। দেশটি এখন নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আঞ্চলিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষাপটে অনেকের দৃষ্টি এখন ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে সিরিয়ার সম্পর্কের দিকে।

সিরিয়া ও ‘ইসরায়েলের’ মধ্যে কিছু গোপন আলোচনা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রটেছে। এমনকি ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে যেসব কারণে দুই দেশ এখনো টেকনিক্যালি ‘যুদ্ধরত’, সেই অবস্থা বদলে দিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটা সময়সীমাও ঠিক করা হয়েছে।

সিরিয়া ও ‘ইসরায়েলের’ মধ্যে এই সম্ভাব্য সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ সম্পর্কে আপনার জানার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত কী ঘটেছে?

‘ইসরায়েলি’ গণমাধ্যম জানিয়েছে, সিরিয়া ও ‘ইসরায়েল’ সরাসরি আলোচনায় বসেছে, যার লক্ষ্য একটি স্বাভাবিকীকরণ চুক্তিতে পৌঁছানো। জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই দুই দেশের মধ্যে গোপন যোগাযোগে সহায়তা করেছে এবং একটি ‘ব্যাক চ্যানেল’ বা বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে।

সম্ভাব্য এই চুক্তি ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এর সম্প্রসারণ হতে পারে। এই চুক্তিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কিছু আরব দেশ ও ‘ইসরায়েলের’ মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তার প্রশাসন আরব দেশগুলোকে ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য চাপ দিয়েছিল। এটাকে বলা হয়েছিল ‘টপ-ডাউন অ্যাপ্রোচ’ অর্থাৎ সরকার পর্যায়ে চুক্তি করা।

২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রথম সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। পরে সুদান ও মরক্কোও এতে যোগ দেয়।

সম্প্রতি মে মাসে, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফর করেন। সৌদি আরবে থাকার সময় তিনি সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান বলে জানা গেছে।

স্বাভাবিকীকরণ কি সম্ভব?

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়া ও ‘ইসরায়েলের’ মধ্যে ভবিষ্যতে স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারে, তবে এখনই সেটা খুবই অসম্ভব। সিরিয়ার লেখক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, ‘এই মুহূর্তে সেটা কল্পনাও করা কঠিন’।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের গভীর শত্রুতা রয়েছে, যা বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং সেই সময় ‘ইসরায়েল’ কর্তৃক গোলান মালভূমি দখলের পর আরও বেড়ে যায়।

‘ইসরায়েলের’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গিদিওন সার জানিয়েছেন, সিরিয়ার সঙ্গে যদি কোনো চুক্তি হয়, তবে ‘ইসরায়েল’ গোলান মালভূমিতে তাদের দখল ধরে রাখার বিষয়টি জোর দিয়ে বলবে। এমনকি ‘ইসরায়েলি’ সেনারা বর্তমানে ওই এলাকায় আরও গভীরে প্রবেশ করছে, বাড়িঘর দখল করছে এবং স্থানীয়দের সরিয়ে দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, অনেক সিরিয়ান গোলান মালভূমি ‘ইসরায়েলের’ হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। তবে অনেকেই মনে করেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে আলোচনা করা প্রয়োজন।

রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, “সিরিয়ার মানুষ এখন অনেকটা বিভক্ত। কারণ একদিকে তারা ক্লান্ত সবাই বুঝতে পারছে, সিরিয়া এখন নিজেকে রক্ষা করতে বা ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবে না। তাই আল-শারারের আলোচনায় বসা এক ধরনের ভালো উদ্যোগ।”

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির মতো কোনো চুক্তিতে ফিরে যাওয়াই এখন সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মাথায় ‘ইসরায়েলি’ পার্লামেন্ট সিরিয়ায় বসতি সম্প্রসারণের একটি পরিকল্পনায় ভোট দেয়। এই পরিকল্পনাটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ বলে বিবেচিত। বর্তমানে ‘ইসরায়েল’ অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ৩১ হাজারের বেশি ‘ইসরায়েলি’ বসতি স্থাপনকারী রয়েছে।

সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারারের নেতৃত্বে দেশটি জানিয়েছে, তারা ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে এবং ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে প্রস্তুত। তবে ৮ ডিসেম্বর, যেদিন আল-আসাদ রাশিয়ার মস্কো শহরে পালান, সেদিনই ‘ইসরায়েলের’ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তিনি ওই চুক্তিকে বাতিল হিসেবে দেখেন।

‘ইসরায়েল’ বহুবার সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে, দেশটির অনেক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে এবং গোলান মালভূমির সীমান্তসংলগ্ন সিরীয় অংশে দখল নিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়া ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে একটি নতুন ‘অ-আগ্রাসন’ চুক্তির অধীনে চাইতে পারে যাতে ‘ইসরায়েল’ দখল করা নতুন এলাকা থেকে সরে যায়। তবে গোলান মালভূমি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি।

সম্প্রতি কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

সাম্প্রতিক সময়ে ‘ইসরায়েলি’ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সিরিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। এমনকি নেতানিয়াহু মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাককে এই চুক্তিতে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

‘ইসরায়েলের’ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেগবি সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলমান আলোচনার তদারকি করছেন বলে জানা গেছে। টাইমস অব ইসরায়েল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িত এবং আলোচনার অগ্রগতি এখন ‘উন্নত পর্যায়ে’ রয়েছে।

অন্যদিকে, লেবাননের পত্রিকা আল-আখবার জানিয়েছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারারের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সিরিয়া এখনই পুরোপুরি ‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় না, বরং তারা চায় ‘ইসরায়েল’ যেন অন্তত আগ্রাসন বন্ধ করে।

‘ইসরায়েলের’ সঙ্গে আলোচনা থেকে সিরিয়া কী চাইবে?

নিজেদের ভূখণ্ডে ‘ইসরায়েলি’ আক্রমণ বন্ধ হোক তা চায় সিরিয়া। অনেক সিরীয়দের মধ্যে গোলান মালভূমিতে ‘ইসরায়েলের’ বর্ধিত দখল নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে; তবে আল-শারার সরকার দখলকৃত অংশগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

তবে সিরিয়া চাইছে ‘ইসরায়েল’ যেন গোলান মালভূমি ও গত বছর ধরে দখল করা এলাকাগুলো থেকে সরে যায়।

‘ইসরায়েল’ ইতোমধ্যেই নতুন সিরীয় সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেছে, তারা যেন ‘ইসরায়েলের’ সীমান্তের কাছে বিশেষ করে দামেস্কের দক্ষিণে সৈন্য না পাঠায়।

এছাড়া, ‘ইসরায়েল’ ওই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তারা সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায় ও নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। এমনকি ‘সিরীয় দ্রুজদের রক্ষা করার জন্য’ হস্তক্ষেপ করার হুমকিও দিয়েছে।

তবে অনেক দ্রুজ এই হুমকিকে বিশ্বাস করছে না। তারা বলছে, ‘ইসরায়েল’ আসলে এই ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সিরিয়ার জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। নতুন সরকারের প্রতি কিছু দ্রুজের মধ্যে সন্দেহ থাকলেও, বেশিরভাগই ‘ইসরায়েলের’ উদ্দেশ্যকে অবিশ্বাস করছে।

‘ইসরায়েল’ কী চাইবে?

‘ইসরায়েলের’ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিরিয়ার সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিরাপত্তা চুক্তি চান, যা ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির হালনাগাদ সংস্করণ হতে পারে।

মার্কিন দূত টম ব্যারাক বলেছেন, সিরিয়া ও ‘ইসরায়েলের’ মধ্যকার বিরোধ ‘সমাধানযোগ্য’। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, দুই দেশ প্রথমে একটি ‘অ-আগ্রাসন চুক্তি’ দিয়ে শুরু করতে পারে।

তবে গোলান মালভূমির উপর ‘ইসরায়েলের’ দখল অব্যাহত থাকলে, অনেক সিরিয়ান এতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার বিশ্লেষক রবিন ইয়াসিন-কাসাব বলেন, “আমেরিকার চাপ ও ‘ইসরায়েলের’ সহিংস হুমকির মধ্যেও আল-শারারের জন্য এমন একটি চুক্তি করা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত কঠিন।”

এছাড়াও, ‘ইসরায়েলের’ পক্ষ থেকে চুক্তির কিছু অতিরিক্ত শর্তও রয়েছে। যেমন:

  • সিরিয়ায় যেন কোনো তুর্কি সামরিক ঘাঁটি না থাকে।
  • ইরান, হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর উপস্থিতি না থাকে।
  • দক্ষিণ সিরিয়া যেন সামরিকীকরণ না হয়।

এই শর্তগুলো সিরিয়ার পক্ষে মেনে নেওয়া সহজ হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Shera Lather
Link copied!