শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এম রায়হান আহমেদ, লেখক, কবি ও সাংবাদিক।

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

মতামত

হাসিনার মামলার রায় এবং শাটডাউন আতঙ্ক

এম রায়হান আহমেদ, লেখক, কবি ও সাংবাদিক।

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম

হাসিনার মামলার রায় এবং শাটডাউন আতঙ্ক

আগামী ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এ তারিখ ধার্য হয়। এদিন ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি পালন করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির ঘোষণা আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের কোনো গণমাধ্যমে এ খবর আসেনি। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এবারও ১৭ নভেম্বরের রায়কে কেন্দ্র করে ১৬ ও ১৭ নভেম্বর দেশে শাটডাউন কর্মসূচির প্রচারণা অনলাইনেই চালাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। এ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে অজানা আতঙ্ক। গত কিছুদিন অজানা আতঙ্কেই আছে মানুষ। প্রায় সপ্তাহ ধরে দেশের নানা প্রান্তে চলছে নাশকতা। তবু অনলাইনে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছেন নেতারা। তারা অনেকে বিদেশে পলাতক। আর কিছু নিরীহ কর্মী মাঠে নেমে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। আর দেশের ক্ষতিও হচ্ছে। দেশের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। আগুনে পুড়ছে যানবাহন। দেশের খেটে খাওয়া মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির। অজানা ভয় ও শঙ্কায় মানুষ রাস্তায় নামছেন না। 

নিন্দুকেরা বলেন, ঘোষণা ও অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে নিরাপদেই আছেন নেতারা। তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে এসব করছেন। আর ক্ষতি যা হচ্ছে তা দেশ ও দেশের মানুষের। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরুচ্ছে নেতারা কর্মীদের চাঙ্গা করছেন। 

আরও জানা যাচ্ছে,  বৈদেশিক চাপ আছে আওয়ামী লীগের ওপর। যেন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় এমন চাপ অবশ্যই আসতে পারে দলটির মিত্র দেশ থেকে। কিন্তু ভাবতে হবে দেশের কথা। দলটি কিন্তু দেশের মঙ্গল কামনা করে এমন দাবি করে। গত ১৩ নভেম্বর নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ১৬ ও ১৭ নভেম্বর সারাদেশে ঘোষিত ‘সর্বাত্মক শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়। আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তিটি চুম্বক অংশ এমন— ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দেশব্যাপী ঘোষিত বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে দুর্বার গতিতে অংশগ্রহণ করুন। আগামী ১৬ ও ১৭ নভেম্বর সারা দেশে ঘোষিত ‘সর্বাত্নক শাটডাউন’ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করুন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক ইউনিটকে সকল কর্মসূচি সফল করতে সর্বোচ্চ নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক ‘লকডাউন’ কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল ও সার্থক করায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সংগ্রামী দেশবাসী এবং বিশেষভাবে অগ্রণী ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থী সমাজকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। 

বলা চলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা কখনোই সরল ও সহজ ছিল না। পাঁচ দশকের পথচলায় বহুবার গণতান্ত্রিক ধারা হোঁচট খেয়েছে, ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে বারবার, আর গণতন্ত্রের শেকড় দুর্বল হয়ে পড়েছে নানা পর্যায়ে।

আরও বলা যায়, দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেননি রাজনৈতিক দলের নেতারা। আর যদি ভাবতেন তবে জনগণের ও দেশের ক্ষতি হয় এমন সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতেন তারা। 

আমরা জানি, গত বছরের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও দেশ ও দশের প্রশ্নে এক ধরনের ঐক্যের সূচনা হয়েছিল। সে সময় গণতান্ত্রিক চর্চার গুণগত উন্নয়ন এবং কাঠামোগত আমূল পরিবর্তনের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কষ্টের কথা, খুব অল্প সময়ে সেই অগ্রযাত্রা নানা কারণে বিনষ্ট হয়ে পড়েছে। 

এখন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা দেখতে পাই, আলোচনার টেবিল ছেড়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে আছে। ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে এখন আর কোনো রাখ-ঢাক নেই; পুরোনো দোষারোপ আর ঘায়েল করার সংস্কৃতি আবার দেখা যাচ্ছে। এই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। 

একটি বিষয় স্পষ্ট ধরা পড়ছে, লকডাউন কিংবা শাটডাউনের খবর ফলাও করে প্রচার করছে প্রতিবেশি একটি দেশের গণমাধ্যম। আমরাও দেখছি গণমাধ্যমে লেখা হচ্ছে বৈদেশিক চাপ আছে আওয়ামী লীগের ওপর; যেন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ থেকেই বুঝা যায় বাংলাদেশ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি সুখকর নয়। সম্প্রতি তা আমরা দেখতেও পাচ্ছি। প্রতিদিন দেশের ও মানুষের সম্পদহানি হচ্ছে। জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। অনেক সময় প্রাণহানিও হচ্ছে। নাশকতার আগুনে পুড়ে মারা পড়ছে মানুষ। 

আমরা কি ধরে নেব, সহিংস আচরণের মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা এবং দেশে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করাই এই তৎপরতার লক্ষ্য? 

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) পরবর্তী সময়টিতে আরো এগিয়ে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাত বা সহিংসতার শঙ্কা প্রবল। 

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লকডাউন কিংবা শাটডাউনের মতো কর্মসূচিকে ঘিরে হুমকি বা হুংকার রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে কর্তৃত্ববাদী শক্তির পুনরুত্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। গুজব, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া তাদের প্রধান হাতিয়ার। 

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তুতির কথা বলছে। আর জনগণ অভাবে পড়েও উদ্দিষ্ট কাজে বের হচ্ছেন না। খেটে খাওয়া মানুষটির অভাব আরো বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাপক নাশকতার আশঙ্কা পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। নানা জল্পনা-কল্পনা ও ভয়ের আবহ ঘনীভূত হচ্ছে। 

রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন হুমকি ও আতঙ্ক সৃষ্টি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। তাদের ভাষ্য কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর পতনের মুখোমুখি হয়েও আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনো আত্মসমালোচনা দেখা যাচ্ছে না; বরং দেশকে শাটডাউন করার হুমকি দিয়ে দলটির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রকট করা হচ্ছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ ও জনগণের চেয়ে ক্ষমতাই আওয়ামী লীগের কাছে মূল্যবান।

তাদের মতে, দলটির ক্রমাগত হুমকি বিচার প্রভাবিততো করবেই, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেও প্রভাবিত করবে। শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থের পাশাপাশি দলটি চাচ্ছে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন না হয়। তাদের পরামর্শ এসব তৎপরতা, ফ্যাসিবাদী শক্তির অপকৌশল, দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। বহু বছর ভোটাধিকারের সুযোগ না পাওয়া নাগরিকরা এবার অধীর হয়ে আছেন ভোট দিতে। কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রও থামছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন— ভেতর ও বাইরে থেকে অনেক শক্তি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে এবং এটি হবে এক চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। তার এই সতর্কবার্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সব দিক বিবেচনায় দেশের গণতন্ত্রকামী, জুলাই আন্দোলনের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে সমঝোতা গড়া। রাজপথ কোনোভাবেই অরাজনৈতিক পতিত শক্তির দখলে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সংঘাতমুখী রাজনীতিকে ঠেকিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আরও সুসংহত করাই এ মুহূর্তের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

এদিকে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা বলতে পারেন কর্মসূচি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সহিংস কর্মসূচি কারো অধিকার হতে পারে না। আর দলটি বিগত অননেকটা সময় দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রাখেনি। 

আবার যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘লকডাউন’ বা ‘শাটডাউন’ হিসেবে রূপ নেয়; সেখানে সাধারণ মানুষ, ব্যবসা, যানবাহন, অর্থনীতি সবই প্রভাবিত হয় তখন তা মঙ্গলময় রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে না। 

শেষ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি— বাংলাদেশ আজ এক কঠিন বিভাজনে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে গণতন্ত্রের দীর্ঘ সংগ্রাম, জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তমাখা প্রত্যয় এবং সাধারণ মানুষের বহু বছরের স্বপ্ন; অন্যদিকে সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব, অস্থিতিশীলতা আর ক্ষমতাকে যেকোনো মূল্যে ফেরত পাওয়ার মরিয়া রাজনীতি। লকডাউন হোক কিংবা শাটডাউনের ডাক এসব কর্মসূচি যে গণতান্ত্রিক অধিকার নয়, বরং মানুষের জীবনে নতুন বিপর্যয় ডেকে আনে, তা আজ প্রমাণিত। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে যদি রাস্তার সহিংসতা, আতঙ্ক সৃষ্টি, বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা কিংবা অর্থনীতিকে পঙ্গু করার অস্ত্রে পরিণত করা হয়—তবে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ, জনগণ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ।

গণতন্ত্র কখনো ভয়-ভীতি, নাশকতা বা জ্বালাও-পোড়াওয়ের ওপর দাঁড়ায় না; দাঁড়ায় সংলাপ, সহমর্মিতা, মতের ভিন্নতাকে ধারণ করার ক্ষমতা এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার যৌথ ইচ্ছার ওপর। তাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো— জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নতুন করে আত্মসমালোচনা, সংলাপ ও সমঝোতার পথে ফেরা। রাজপথ কোনোভাবেই সহিংসতার হাতে তুলে দেওয়া যাবে না; রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরীক্ষাগারে পরিণত করা চলবে না।

বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, স্বাভাবিক জীবন চায়, অর্থনৈতিক স্বস্তি চায় এবং সবচেয়ে বড় কথা— একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন চায়। এই মানুষের প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করে যেকোনো কর্মসূচি— যা আতঙ্ক ছড়ায়, নাশকতা বাড়ায়, বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে বা নির্বাচনকে বিপন্ন করে তা দেশের জন্য অকল্যাণকরই হবে। তাই, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন একটাই পথ খোলা—গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং সহিংসতার রাজনীতি পরিত্যাগ করার পথ।

অবশেষে বলা যায়, যে শক্তি জনগণকে ভয় দেখিয়ে নয় বরং পাশে দাঁড়িয়ে, ক্ষতি করে নয় বরং রক্ষা করে, বিভাজন তৈরি করে নয় বরং ঐক্য গড়ে— সেই শক্তিই ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। আজকের এই উত্তাল সময় আমাদের সামনে সেই পরীক্ষাই রেখে গেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!