রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম

যুদ্ধে ‘যৌন সহিংসতা’ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃত

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

আধুনিক অনেক সংঘাতেই ‘যৌন সহিংসতা’ দুঃখজনক হলেও ব্যাপকভাবে দেখা যায়। ইতিহাস জুড়ে সশস্ত্র সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রযোজ্য একটি বাস্তবতা হয়ে আছে এবং প্রায়শই এটি যুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ধরা হয়। যৌন সহিংসতা ভুক্তভোগীদের- নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে- ব্যক্তিগত জীবন, তাদের পরিবার এবং পুরো সম্প্রদায়ের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। উপরন্তু, এসব লঙ্ঘন ব্যাপকভাবে কম রিপোর্ট করা হয়; তাই এর বিস্তার ও প্রভাব সাধারণত অবমূল্যায়ন হয়। ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন চাহিদার প্রতি মানবিক প্রতিক্রিয়া এখনো অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে।

এইসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সশস্ত্র সংঘাতে ‘যৌন সহিংসতা’ রোধ করা সম্ভব। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে আমাদের প্রথমেই পরিস্কারভাবে জানতে হবে ‘যৌন সহিংসতা’ বলতে আমরা কী বোঝাচ্ছি।

‘যৌন সহিংসতা’ বলতে বোঝায় বলপ্রয়োগ বা জোর ব্যবহার করে আরোপিত যৌন প্রকৃতির কার্যকলাপ- যেমন- ভয় দেখানো, জোর, আটক, মানসিক নিপীড়ন বা ক্ষমতার অপব্যবহার- যা কোনো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে করা হয়। ভুক্তভোগী হতে পারেন পুরুষ, নারী, ছেলে বা মেয়ে। জবরদস্তিমূলক পরিবেশের সুযোগ নেওয়া বা প্রকৃত সম্মতি দিতে অক্ষম ব্যক্তির সঙ্গেও যৌন কার্যকলাপ ঘটানো ‘যৌন সহিংসতা’র মধ্যে পড়ে। ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক গর্ভধারণ, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ এবং অন্যান্য গুরুতর যৌন নিপীড়নের ধরনগুলো এই সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

এমন ঘটনাগুলো সাধারণত বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে না; এগুলো প্রায়শই হত্যাকাণ্ড, শিশু নিয়োগ, সম্পত্তি ধ্বংস ও লুটপাটের মতো সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কখনো কখনো যৌন সহিংসতা প্রতিশোধ, ভয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, বা নির্যাতনের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তদুপরি, এটি সামাজিক কাঠামো ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে যে কোনো সংঘাতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত একটি কৌশল হয়ে উঠতে পারে।

সশস্ত্র সংঘাতে ‘যৌন সহিংসতা’ কাদের প্রভাবিত করে এবং কীভাবে? সংঘাত ও সহিংসতার পরিস্থিতিতে নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে ভিন্নভাবে প্রভাবিত হন। কিছু জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তিগত অবস্থান তাদের অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে ফেলে- যেমন- অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা, অভিবাসীরা, বিধবা বা পরিবারের মহিলা প্রধানরা, আটক ব্যক্তিরা, সশস্ত্র বাহিনী বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরা, কিংবা নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর অনুষঙ্গ। পুরুষ ও ছেলেদেরও যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয়; বিশেষ করে আটক বা বন্দি ব্যক্তিরা প্রায়শই অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকে।

‘যৌন সহিংসতা’র শারীরিক ও মানসিক প্রভাব গুরুতর। এগুলোর ফলে আঘাত, যৌনসংশ্লিষ্ট রোগ ও সংক্রমণ, এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি এবং মাঝে মাঝে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা প্রায়শই দ্বিগুণ ভোগান্তির সম্মুখীন হন- শারীরিক ও মানসিক আঘাতের পরে পরিবার ও সম্প্রদায় থেকে কলঙ্ক ও প্রত্যাখ্যানের শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধবোধ, লজ্জা, প্রতিশোধের ভয় বা সামাজিক বিধিনিষেধদের কারণে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলে বলতে পারে না; ফলে সমস্যাটির প্রকৃত বিস্তার অদৃশ্য থাকে এবং ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছানো ও সহায়তা প্রদানে সমস্যা দেখা দেয়।

ভুক্তভোগীদের চাহিদাগুলো কী? মানবিক প্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সদয়, সংবেদনশীল ও সম্মানজনক আচরণ করা বাধ্যতামূলক। গোপনীয়তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখা জরুরি এবং প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার সময় কঠোর গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও আরও আক্রমণ প্রতিরোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা প্রতিশোধ বা পুনরায় আক্রমণের ভয় তাদের সহায়তা চাইতে বাধা দেয় এবং সাহায্য চাইলে তাদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। তাই যারা ন্যায়বিচার চান, তাদের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে সহায়তা দিতে হবে।

‘যৌন সহিংসতা’র ভুক্তভোগীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর আঘাতের কারণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। যৌনবাহিত রোগ, সংক্রমণ ও এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এবং দেশের আইন অনুযায়ী জরুরি গর্ভনিরোধক ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মানসম্মত ও সময়োপযোগী চিকিৎসা প্রদান অপরিহার্য। ধর্ষণের ফলে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ হলে ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনে অনিরাপদ পদ্ধতিতে গর্ভপাতের চেষ্টা করতে পারে, যা তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। অনিরাপদ গর্ভপাত একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশু এবং তাদের মায়েরাও সামাজিকভাবে ও স্বাস্থ্যগতভাবে অত্যন্ত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে; এমন শিশুদের শিশুহত্যা বা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঝুঁকিও থাকতে পারে।

যখন আঘাত তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তখন মানসিক সহায়তা এবং ব্যাপক স্বাস্থ্যসেবা অত্যাবশ্যক। সশস্ত্র সংঘাতের জটিল পরিবেশে চিকিৎসা সেবা প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ভুক্তভোগী জরুরি চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে অবগত নয়, অথবা নিরাপত্তাহীনতা, ভয়ের কারণে বা উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাবে সেবা নিতে সক্ষম হন না। সংঘাতের ফলে চিকিৎসা অবকাঠামো সীমিত বা ধ্বংস হয়ে গেলে ভুক্তভোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর সময় ভুক্তভোগীরা বড় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখোমুখি হন- তাদেরকে দুর্গম বা অনিরাপদ পরিবেশে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হতে পারে, বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সংঘর্ষের কারণে অপ্রাপ্য হয়ে যেতে পারে। মানবিক সংস্থাগুলোও সংঘাতের জটিলতার কারণে প্রয়োজনীয় যত্ন প্রদানে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন থাকে।

স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও মানবিক প্রতিক্রিয়ায় আরো কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। ঝুঁকি সচেতনতা ও ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আরও লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। যারা ন্যায়বিচার চান, তাদের উপলব্ধ সহায়তা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবহিত করা উচিত এবং প্রতিশোধ, বাদবাকি বা নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সময়ও ভুক্তভোগীদের ঝুঁকিতে না ফেলাই গুরুত্বপূর্ণ।

অনেক পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা সম্প্রদায়ের সঙ্গে পুনঃসংহতকরণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তাদের এবং তাদের সন্তানদের কলঙ্ক, প্রত্যাখ্যান ও বর্জন থেকে রক্ষা করতে শিক্ষার ব্যবস্থা করা জরুরি। পাশাপাশি অংশীদার, শিশু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও সমর্থন, নির্দেশনা ও যত্নের প্রয়োজন পড়ে। যারা বাস্তুচ্যুত বা জীবিকা হারিয়েছেন, তাদের জীবন পুনর্নির্মাণের জন্য আশ্রয় ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান প্রায়শই অপরিহার্য হয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে ‘যৌন নির্যাতন’ ও অন্যান্য সহিংসতা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে- তবে এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়; এটি বহু সংঘাতে বিদ্যমান একটি কৌশল। সাম্প্রতিক সংঘাতগুলো- মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন, ইথিওপিয়া, সুদান ও অন্যান্য স্থানে- যেখানে মৃত্যুর পাশাপাশি ‘যৌন সহিংসতা’ও মুখ্য অস্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে দেখা গেছে। দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও এই ধরণের লঙ্ঘন প্রায়শই রিপোর্ট করা হয় না। তবে আধুনিক প্রেক্ষিতে, বিশেষত ১৯৯০-এর দশকের রুয়ান্ডা ও ইউগোস্লাভিয়ার সংঘাত পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘ এই বিষয়টিকে কেবল সংঘাতের অনিবার্য উপপ্রবণতা হিসেবে দেখেনি; বরং এটি যুদ্ধাপরাধের একটি শ্রেণী হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে, ফলে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের ঘটনার জন্য মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়েছে।

‘সংঘাত-সম্পর্কিত ‘যৌন সহিংসতা’ শব্দটি প্রথম প্রবর্তিত হয় ২০০০ সালে, যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডা চালু করে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস-নেতৃত্বিত আক্রমণের সময় ব্যাপক ‘যৌন সহিংসতা’র ঘটনাও ঘটেছে। যদিও কিছু সমালোচক এই অভিযোগকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন।

একই প্রতিবেদনে এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে যারা ইসরায়েলে আটক ছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই আটককালে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন; ফিলিস্তিনি পুরুষরাও কারাবন্দি অবস্থায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে কিছু সূত্রে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া কিছু রিপোর্টে বর্ণিত একটি ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে- একটি সময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি জিপ দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণস্থলের পাশে হেঁটে যাওয়া কয়েক কিশোর ছেলের পাশে থামে; সৈন্যরা ছেলেদের হাত তুলে দিতে বললে তাদের নগ্ন করে ফেলার ঘটনা ঘটেছে- যা সেই কিশোরদের বর্ণনায় মাসব্যাপী চালোনো আক্রমণের অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন (COI)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যৌন, প্রজনন ও অন্যান্য লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ব্যবহার করেছে এবং গাজায় নারীদের স্বাস্থ্যসেবা ও প্রজননস্বাস্থ্য সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে ‘গণহত্যামূলক’ কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এইভাবে প্রতিবেদনে গাজার ওপর ইসরায়েলি অভিযানসমূহের নিষ্ঠুরতা এবং তা কীভাবে নারীদের ওপর বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে তা তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় কার্যকর হওয়ার পরও আক্রমণের সময় ইসরায়েল কর্তৃক সংঘটিত পরিস্থিতি মহিলা ও মেয়েদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে প্রভাব ফেলেছে; এতে আবাসন, প্রসুতি ওয়ার্ড, মাতৃত্বকালীন চিকিৎসা কেন্দ্র এবং অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী অবকাঠামোতে ক্ষতি ও ধ্বংস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে নারীদের সুরক্ষার জন্য থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ক্ষতিসাধনও ঘটেছে। ইসরায়েলি আটক কেন্দ্র থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি ব্যক্তিরা বলেছে- আটক অবস্থায় তাদের নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে।

সশস্ত্র সংঘাতে ‘যৌন সহিংসতা’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (IHL) কী বলে? ধর্ষণ ও অন্যান্য ধরনে যৌন সহিংসতা- যখন তা আন্তর্জাতিক বা অ-আন্তর্জাতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়- তখন তা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের ওপর ভুক্তভোগীদের যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা প্রদানের এবং ভুক্তভোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অপরাধীদের ফৌজদারি বিচার করার দায়বদ্ধতা প্রতিটি রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত।

ধর্ষণ ও অন্যান্য ‘যৌন সহিংসতা’ চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন এবং তার অতিরিক্ত প্রোটোকলসহ প্রথাগত আন্তর্জাতিক নিয়মাবলীর অধীনে নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সংবিধিতে ধর্ষণ ও নির্দিষ্ট যৌন সহিংসতা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখিত আছে, এবং যদি এগুলো কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বা পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ হিসেবে সংঘটিত হয়, তবে সেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হবে। ধর্ষণ ও অন্যান্য ‘যৌন সহিংসতা’ আন্তর্জাতিক অপরাধও হতে পারে; উদাহরণস্বরূপ, ধর্ষণ নির্যাতন হিসেবে গণ্য হতে পারে, বিশেষত যখন এটি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়।

এছাড়া ‘যৌন সহিংসতা’ গণহত্যার একটি মাধ্যমও হতে পারে- যখন এটি এমনভাবে আরোপ করা হয় যে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধ করা হয়; উদাহরণস্বরূপ যৌন অঙ্গচ্ছেদ বা জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ প্রয়োগ করে একটি গোষ্ঠীর জন্মহার কমানো যায়- এমন কৌশল ইতিহাসে দেখা যায়। সংক্ষেপে, সশস্ত্র সংঘাতে সংঘটিত প্রতিটি ধর্ষণই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত এবং অপরাধীদের বিচার করা প্রয়োজন।

সশস্ত্র সংঘাতে ‘যৌন সহিংসতা’র জন্য যারা দায়ী- তাদের সম্পর্কে কী বলা যায়? সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ভুক্তভোগীদের ‘যৌন সহিংসতা’র বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়; একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দায়বদ্ধতাও তাদের ওপর অর্পিত। রাষ্ট্রগুলোকে দেশীয় আইনের মাধ্যমে এসব লঙ্ঘনকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে কার্যকর তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়বদ্ধতা প্রযোজ্য- অর্থাৎ ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতার জন্য ব্যক্তিদের বিচার করা যেতে পারে।

অফিসিয়াল পর্যবেক্ষণ বা তথ্য সংগ্রহের সময় ‘যৌন সহিংসতা’ সংঘটনের সম্পর্কিত প্রমাণ ও বর্ণনার গুরুত্ব অপরিসীম। এ ধরনের তথ্যের মধ্যে থাকা উচিত: ভুক্তভোগী ও সম্প্রদায়ের ওপর এই কাজের প্রভাবের বর্ণনা, তাদের আইনি ও ফৌজদারী পরিণতি, অপরাধীদের শনাক্তকরণ ও শাস্তির ব্যবস্থা, জনগণকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের ঝুঁকি হ্রাস করার পদক্ষেপসমূহ। গোপন সংলাপ বা কর্তৃপক্ষ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কথোপকথনের সময়ও এসব তথ্য সতর্কতার সঙ্গে সংগৃহীত ও বিশ্লেষণ করা উচিত, যাতে ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় এবং বিচারপ্রক্রিয়া কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা যায়।

Link copied!