মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

রোহিঙ্গা সংকট: বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী বোঝা

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ইতিহাস বহু পুরোনো। গত শতাব্দীর সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। তবে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক নিধনযজ্ঞ ও জাতিগত নিপীড়নের পর একে একে প্রায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে- যা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত। আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গাসহ সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এত বিপুল জনগোষ্ঠীর আগমন বাংলাদেশের জন্য শুধু মানবিক নয়; কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবেও বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পেছনে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিলেও এর প্রভাব বহুমাত্রিক। কক্সবাজারের বিশাল বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে, পাহাড়ি ভূমি ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয় শ্রমবাজারে মজুরি কমে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের বিস্তার সমাজে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রোহিঙ্গাদের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিতে বছরে হাজার কোটি টাকার চাপ পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে এলে বা বন্ধ হলে এ বোঝা একাই বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে কঠিন।

রোহিঙ্গা উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলে মাদক পাচার, মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসা ও উগ্রপন্থার বিস্তার আশংকাজনকহারে বাড়ছে। বিশাল এই জনগোষ্ঠী দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় শিবিরনির্ভর থাকলে তারা বিকল্প জীবিকা খুঁজবে, যা অপরাধচক্রের খপ্পরে পড়ার আশংকা বাড়ায়। তাছাড়া, রোহিঙ্গাদের ক্রমবর্ধমান হতাশা রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান বা আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্বারা ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকিও অস্বীকার করা যায় না। আরও বড় আশঙ্কা হলো- রোহিঙ্গারা যদি স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থেকে যায়, তাহলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যার ভারসাম্যে পরিবর্তন আসতে পারে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করবে। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত না হওয়ার পেছনে মিয়ানমারের অস্বীকৃতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দায়ী। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ নিয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছে এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রত্যাবাসনের কোনো স্থায়ী অগ্রগতি হয়নি। এ পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো, মিয়ানমারকে দায়বদ্ধ করা এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও সেখানে তাদের বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা, চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশগুলোকে প্রত্যাবাসনের পক্ষে একমত করানো এবং আসিয়ানকে কার্যকরভাবে যুক্ত করার পথই এখন সবচেয়ে বাস্তবসম্মত।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান বাংলাদেশে নয়- সমাধানের জায়গা মিয়ানমার। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতিকারে বাংলাদেশের সামনে তিনটি মূল দিক গুরুত্ব পায়। প্রথমত, মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখে ক্যাম্পে নিরাপত্তা, শিক্ষা ও নিয়ন্ত্রিত জীবিকা নিশ্চিত করা, যাতে রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমে। দ্বিতীয়ত, কূটনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতাকে শক্তিশালী করা, যাতে মিয়ানমারের ওপর বাধ্যতামূলক প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়। তৃতীয়ত, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ উন্নত করা, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা এবং অপরাধচক্র মোকাবিলায় বিশেষ বাহিনী ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা।

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার বাস্তবতা আমাদের সামনে কঠিন এক ভবিষ্যৎ তুলে ধরে। মানবিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আবেগ নয়, কৌশল দরকার; তাৎক্ষণিক সমাধান নয়, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ এবং একক প্রচেষ্টা নয় বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই হতে পারে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার কার্যকর পথ। বাংলাদেশের দৃঢ় কূটনৈতিক অবস্থান, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সম্পৃক্ততা এবং মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপই শেষ পর্যন্ত এই গভীর সংকটের টেকসই সমাধান নির্ধারণ করবে।

(লেখক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক) 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!