ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নয় মাস পর রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশের সবচেয়ে পুরোনো এই রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির ওপরও। দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি এখন রাজপথে জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
বার বার আওয়ামী লীগের ক্ষমতার বাহন জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
এদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার ১২ ঘণ্টা না যেতেই জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদ। গতকাল রোববার (১১ মে) দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান এ দাবি তোলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তাই এবার আওয়ামী লীগের সহযোগী জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, গণঅধিকার পরিষদ মনে করে, শুধু সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা নয়, আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত নিবন্ধন বাতিল না হলে এই গণ-অভ্যুত্থান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিবন্ধন বাতিল এবং চূড়ান্তভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে নির্বাচন কমিশন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তারা। এ সময় জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলে আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়ার ঘোষণা দেন।
ওদিকে রাজনৈতিক নিষিদ্ধের ঝুঁকির বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকার যেভাবে আগাচ্ছে তাতে জাতীয় পার্টির জন্য ঝুঁকি তো আছেই। তবে একথা সবার মনে রাখতে হবে কোনো দলের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক সমাধান নয়। তিনি বলেন- যারা অপরাধ করেছে তাদের বিচার হবে, একটা দলের সব নেতাকর্মী সমর্থক তো আর অপরাধ করেনি।
জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার নেতা দাবিদার বিদিশা এরশাদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর জিএম কাদের জাতীয় পার্টির অবৈধ চেয়ারম্যান। তাকে অনেক আগেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, এইচ এম এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি তৃণমূল নেতাকর্মীরাই পুনর্গঠন করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শুরুতে সেনাবাহিনী ও পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপে ডাক পাওয়া জাপা’র জন্য সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু দলটির নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে তারা রাজনীতি থেকে ছিটকে যান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপে সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা জাপাকে ডাকেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে জাপা’র রাজনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে পড়েছে। দলের নেতাকর্মীরাও আছেন নিষ্ক্রিয়।