ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পথে ১০টি অন্তরায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক ভিডিও বার্তায় সব বাধার ব্যাখ্যা তুলে ধরে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, জনগণকে ক্রমাগত মিথ্যা তথ্য ও আইনি অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছে সরকারের উপদেষ্টা। জনগণের কাছে তাদের এই কূটকৌশল প্রকাশ করার জন্যে এই তথাকথিত ‘১০টি’ পয়েন্টের জবাব দিলাম।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থেকে পোস্টে এসব যুক্তি তুলে ধরেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ১০টি তথাকথিত পয়েন্টে হাজির করা হয়েছে। সম্পূর্ণ আইনি বিচার বিশ্লেষণ করেই নির্বাচনি ট্রাইবুনাল অবশ্যই রায় দিয়েছে। আর আইনি বিচার বিশ্লেষণ করেই নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে শপথের প্রথম বাধা হিসাবে যুক্তি দেন, আর্জি সংশোধন অবৈধ মর্মে হাইকোর্টের রায় ভায়োলেট করে নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করেছে।
এ যুক্তির বিপরীতে ইশরাক হোসেন বলেন, আর্জি সংশোধন কোর্ট অব সিভিল প্রসিডিউর আইনের অর্ডারে ৬ রোল ১৭ অনুযায়ী আর্জি সংশোধন করা যায়। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের কোনো আইনকে ভায়োলেট করা হয়নি। অথচ স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আইন না জেনে শুধুমাত্র সাধারণ জনগণকে ভুল বুঝানোর জন্যে এ কথা বলেছেন। তিনি বলার চেষ্টা করছেন, একটি নির্বাচনের মামলার অর্ডারে হাইকোর্টের একটি অবজারভেশন ছিলো। আর সেই অবজারভেশন অনুসারে তিনি বলছেন, আমরা ভায়োলেট করছি। কিন্তু অবজারভেশন ইজ অবজারভেশন। এটা আইনের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। এটা আইনের অর্ডার ৬ রোল ১৭ অনুযায়ী আর্জি সংশোধন করা যায়।
আসিফ মাহমুদের দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল, নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশগ্রহণ না করায় একপাক্ষিক রায় হয়েছে এবং পরবর্তীতে কমিশন আপিলও করেনি। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক বলেন, উক্ত মামলাটি একতরফা রায় হয়নি। মামলার বিপক্ষে পলাতক মেয়র ফজলে নূর তাপস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মামলার জবাব দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্টেরে করে রাখেন। এ কারণে এটি একতরফা রায় নয়। যথাযত আইন মেনে ও আইনি অসামঞ্জস্যতা না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। এতে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
তৃতীয়ত, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলেও মতামত দেওয়ার আগেই এবং একইসঙ্গে দুইজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশ উপেক্ষা করে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর বিপরীতে ইশরাক বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্টান। তাদের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল থাকার পরও অধিকতর বুঝার জন্য আইন উপদেষ্টার নিকট ফাইল পাঠানো হয়। পরে তারা দেখে-শুনে আইনের কোনো ব্যত্যয় না হওয়ায় ফাইল পুনরায় ফেরত পাঠায়। তারপর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। আর আমাদের রায়ে স্পষ্ট লেখা ছিল, ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। ওইদিন রাত বারোটা হলে ১০দিন পার হয়ে যেতো, তাই দুই ঘণ্টা আগে রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর দুইজন নাগরিকের পাঠানো লিগ্যাল নোটিস প্রেরণকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটির ভোটার না। এতএব এখানে তাদের সংক্ষুদ্ধ হওয়ার সুযোগ নাই। আর এসব কাজ কম্পিউটারের দোকানে বসে লেখে বা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে এই কাজ করা যায়। আর আমাদেরকে বাধার দেওয়া জন্য, তারা এই ধরনের লোক ভাড়া করেছে।
চতুর্থত আসিফ লেখেন, এই মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না এবং রায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনার উল্লেখ নেই। ইশরাক বলেন, আমি বলবো এটা চরম অজ্ঞতা। স্থানীয় সরকার বিভাগকে পক্ষভুক্ত করার কোনো কারণ নেই। এটা হয় না। কারণ স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচনের কোনো পক্ষ না। তাদের কাজ হলো নির্বাচন কমিশনের আদেশ মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পঞ্চমত, শপথ না দেওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যা এখনো বিচারাধীন। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রিট সংক্রান্ত যত মতামত দিয়েছে- উনার অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। কোনো মামলার শুনানির জন্য কোনো অর্ডার বা শপথ বন্ধ হবে না।
ষষ্ঠত, বরিশাল সিটি করপোরেশনসংক্রান্ত মামলায় আর্জি সংশোধনসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়কে আমলে নিয়ে খারিজ করেছে ট্রাইব্যুনাল। ফলে ট্রাইব্যুনালের দ্বিমুখী অবস্থান বোধগম্য হচ্ছে না। এর জবাবে বিএনপির নেতা ইশরাক বলেন, কার্যত বরিশাল সিটি করপোরেশনের এই ঘটনা নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। নির্বাচন সময় ট্রাইবুনাল করা হয়। সেখানে স্পষ্ট লেখা থাকে, ৩০ দিনের মধ্যে কোনো অভিযোগ থাকলে দায়ের করতে হবে। আর সেই সময় বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। পরে আবেদন করলে আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। তারা সম্ভবত হাইকোর্টে এই নিয়ে আবেদন করবেন।
সপ্তম, মেয়াদসংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছে; কতদিন মেয়র থাকবেন বা আদৌ মেয়াদ আছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সংক্রান্ত মতামত শিশুসুলভ। আগে শপথ পরে মেয়াদ কতদিন থাকবে সেই সিন্ধান্ত নির্বাচন কমিশন দিতে পারে। আর নির্বাচন কমিশন যদি অপরগতা প্রকাশ করে তাহলে উচ্চ আদালতে যাবো। অথবা স্থানীয় সরকারে বিদ্যমান কোনো আইনে নির্বাচন কমিশন বরখাস্তও করে তাহলে সেই পদটি খালি হবে। আর এইখানে মেয়াদের কারণে দুয়াশা সৃষ্টি করেছে। এটার (শপথের) সঙ্গে মেয়াদের কোনো সম্পর্ক নাই।
অষ্টম, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে ‘কোনোপ্রকার আইনি জটিলতা না থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ’ এর কথা বলা হয়েছে। স্পষ্টতই বিতর্কিত রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি কোনো নির্দেশনা না থাকা, লিগ্যাল নোটিশ এবং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকাসংক্রান্ত আইনি জটিলতা রয়েছে। এইদিকে ইশরাক আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে কোনো জটিলতা না থাকলে পরবর্তী নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ এই সংক্রন্ত চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়। সেখানে নির্বাচন কমিশন কেন আপিল করলো না বা আপিল করা যায় কি না জানতে চায়। আর এই সমস্ত কথা বলে নির্বাচন কমিশনকে দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এটা খুব ভয়ানক। তারা নির্বাচন কমিশনের ওপর হস্তক্ষেপ করছেন। আর নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাবে বলা হয়, তারা কোনো আইনের ব্যত্যয় পায়নি। আর এই কপিটি আমার কাছে রয়েছে। একসময় প্রকাশ হবে।
নবম, এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। ইশরাক বলেন, তারা স্পষ্টত মাথার ভেতর থেকে জটিলতা তৈরি করছে। যেন আমি মেয়র না হতে পারি। যার কারণে তারা নতুন নতুন জটিলতা তৈরি করছে। এখন বলছে, আবার জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। তারা এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কালক্ষেপণ করছে।
দশম, আওয়ামী আমলের অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি স্বীকার করে যে, আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলো বৈধ, তবে সরকারের জন্য এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না।
ইশরাক এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আওয়ামী আমলের নির্বাচন নিয়ে আমার কথা বলার কিছু নেই। আমরা তাপসের মেয়রের প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জকে করে মামলা করেছি। আর মামলার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জিতে এসেছি। তাপসের মেয়রের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ করা হয়েছে এবং আমাকে মেয়র হিসাবে রায় দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :