পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস বাজারে স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ৮টার দিকে একটি আলোচনা সভার সময় হঠাৎ করে দুই দলের মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পর পুরো বাজার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর ও হামলার আশঙ্কায় দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এই সংঘর্ষের পেছনে বাজারে দোকান বরাদ্দ (চান্দিনা ভিটি) নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মূল কারণ বলে জানা গেছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গ্রামের বাড়ির সামনেই এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় নুর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দিবাগত মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম ফাহিম। সর্বশেষ রাত দেড়টা পর্যন্ত নুরের অবরুদ্ধ থাকার খবর পাওয়া গেছে।
রাত দেড়টার দিকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নুর জানান, ‘চিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি (ছটকা), লোহার রড, রামদা নিয়ে তাদের পথরোধ করেন। এসময় স্থানীয় কয়েক জনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।’
তিনি আরো জানান, রাত পৌনে ১০টা থেকে ১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত এখনো অবরুদ্ধ। পুলিশ-সেনাবাহিনী এসে এখনো সন্ত্রাসীদের রাস্তা থেকে হঠাতে পারেনি। নির্বাচনে এই প্রশাসন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে?
এর আগে এক বার্তায় গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ দাবি করেন, নুরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা।
তার দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে আমাদের পথরোধ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে। রাত ১১টার পরও পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
এদিকে ভিপি নূরের সঙ্গে থাকা গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো.খায়রুল আমীন মুঠোফোনে জানান, ঘটনার কিছুক্ষণ পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তাদের পাতাবুনিয়া বাজারে বাসিয়ে রাখেন।
প্রায় আড়াই ঘন্টা বাসিয়ে রাখার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিতে অপারগতা জানিয়ে ভিপি নুর ও তাদের গলাচিপা এলাকা ত্যাগ করে পটুয়াখালী জেলা শহরে যেতে অনুরোধ জানান।
এরপর তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগীতা না পেয়ে গলাচিপা ডাকবাংলোতে রাত্রী যাপনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন বলেন, নুরুল হক নুর এলাকায় অবস্থান করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়াও বুধবার তিনি প্রকাশ্যে একটি ঠিকাদারী কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা জড়িয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন। তাছাড়া বৃহস্পতিবার চরবিশ্বাস বাজারে তার লোকজন বিএনপির নেতাকর্মীর উপর হামলা চালিয়েছেন। এইসব উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারনে স্থানীয়রা লোকজন তার প্রতি ক্ষিপ্ত হতে পারেন।
হাসান মামুন আরও বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। ভিপি নুর অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জেনে আমি সেনাবহিনী এবং পুলিশ-প্রশাসনকে উদ্ধারের জন্য আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। আমি চাই গলাচিপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত এবং সুশৃঙ্খল থাকুক।’
ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত ভিপি নূর পাতাবুনিয়া বাজারেই অবস্থান করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :