৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলেও দেশে থেকে বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক কিছুদিন ছিলেন। তবে পরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে তিনি আড়ালে চলে যান। তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও অভিযোগ উঠেছে।
বিচার বিভাগের বিতর্কিত এই চরিত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তার হাত ধরেই দেশের বিচারব্যবস্থা ও গণতন্ত্র ধ্বংসের পথ সুগম হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পেছনেও তার ভূমিকা ছিল।
খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয় প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে শুনানি ছাড়াই।
এছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের পথ তৈরি করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত আদেশ থেকে সরে গিয়ে চূড়ান্ত রায় দেন, যা আওয়ামী লীগ সরকারের ভোট ডাকাতির সুযোগ তৈরি করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক নয় বলে যে রায় তিনি দিয়েছিলেন, সেটিও রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়। শুধু তাই নয়, হাইকোর্টের আগাম জামিনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিল তার এক বিতর্কিত রায়।
অভিযোগ রয়েছে, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কমিশনের গাড়িচালক এসএম সামসুল আলমকে জোর করে অবসর দিতে বাধ্য করেন। সামসুল আলম এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন এবং চাকরি ফেরতের আবেদন করেছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেন খায়রুল হক। এরপর একাধিক মামলা দায়ের হলে তিনি গা ঢাকা দেন। ১৮ আগস্ট ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পরিবর্তন ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। এর আগে ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে এবং পরে শাহবাগ থানাতেও মামলা হয়।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে তার গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
সম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেছেন, বিচারাঙ্গনে কোনো মাফিয়া বা সিন্ডিকেট থাকবে না। খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন।
সূত্র জানায়, খায়রুল হক সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে ভারতে, পরে যুক্তরাজ্যে যান। বর্তমানে কোথায় আছেন তা নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার ছেলে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আশিক উল হক বলেন, বাবা যেখানে থাকার সেখানেই আছেন। মামলার বিষয়ে এখনো আমরা আদালত থেকে কিছু পাইনি।