জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আগামী দিনে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন আসছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ছাড় নেই। সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে মানুষ তা মেনে নেবে না।’
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকেলে যশোরে পদযাত্রা শেষে জজ কোর্ট এলাকায় এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় এনসিপি বদ্ধপরিকর। আদালত, প্রশাসন, চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
‘একটি রাজনৈতিক দল কোটি কোটি মানুষের কথা বলে’ উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের কোটি কোটি মানুষের ভয় দেখাবেন না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মাত্র ১০ জন আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে মানুষ আবাবিল পাখির মতো এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ন্যায়, নীতি ও ইনসাফের সঙ্গে থাকলে মানুষ অবশ্যই পাশে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ মানেই আওয়ামী লীগের পাতানো খেলায় অংশ নেওয়া। যারা সংস্কারবিহীন নির্বাচনের কথা বলেন, তারা দেশের মানুষের জন্য নয়, নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করেন।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই না, আমলা-পুলিশ কোনো দলের দাসত্ব করুক। সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলুক, এটাই কাম্য। আমরা চাই না ডিজিএফআইয়ের কোনো কর্মকর্তা গুমের সঙ্গে জড়িত হোক।’
তিনি নির্বাচন কমিশন (ইসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অন্যান্য সংস্থায় নিরপেক্ষ নিয়োগের দাবি জানান। বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে এখনো আগের মতোই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইসি যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তবে এ দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তবে এনসিপি জনগণকে অন্ধকারে যেতে দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশপন্থি এবং মানুষপন্থি রাজনীতি। বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। আমরা যেমন স্বাধীনতা এনেছি, তেমনি সংস্কারও আনব।’ প্রয়োজনে নতুন করে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
এনসিপি যশোর জেলা শাখা আয়োজিত এ পথসভায় আরও বক্তব্য দেন দলের সদস্যসচিব আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের আলোচনা টেবিলে থাকুক, আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না।’ এনসিপিকে সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই একটি দল কষ্ট পায়, সততা ও সংস্কারের কথা বললেও কষ্ট পায়। যারা সংস্কারে বাধা দেয়, তারা আওয়ামী লীগের পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে।’
উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলমের সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়ক শ্রাবন্তা শারমিন, দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়কের সহকারী সচিব ডা. মাহমুদা মিতু, কেন্দ্রীয় নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল, সাকিব রায়হান ও যশোরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, দিনের শুরুতে যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেলে বেলা ১২টার দিকে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপি নেতারা। পরে যশোর মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে পদযাত্রায় অংশ নেন। পদযাত্রাটি মুজিব সড়ক হয়ে পথসভাস্থলে এসে শেষ হয়।
এতে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। পথসভা শেষে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয় এনসিপির গাড়িবহর।