ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

সরকারে গেলে বিএনপির অগ্রাধিকার কি হবে, জানতে চান বিদেশি কূটনীতিকরা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ১০:৪৪ এএম
তারেক রহমান ও বিদেশি কূটনীতিকরা। ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার জানতে বিদেশি কূটনীতিকরা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। লন্ডনে বসেই তারেক রহমান বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি, কূটনীতিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন।

কূটনীতিকরা জানতে চাইছেন- নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে কোন কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে দলটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কাতারের একজন মন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ইন্দোপ্যাসিফিকবিষয়ক পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি ক্যাথরিন ওয়েস্ট, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের সাবেক গবেষণা পরিচালক রজ ক্যাম্পসেল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (সিডিএ) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসও লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

কূটনৈতিক মহলের মতে, আগামী নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে। এরই অংশ হিসেবে তারা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির অবস্থান জানতে আগ্রহী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে গঠিত হয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়া অতীত নির্বাচনগুলোর বিপরীতে এবার একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা প্রচার ও চরিত্রহননের চেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কূটনৈতিক বৈঠকগুলো তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করছেন।

বিএনপি ইতোমধ্যে জনগণের সামনে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যাতে নির্বাচনি ব্যবস্থা, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক শাসন কাঠামোর ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে। এসব পরিকল্পনা নিয়েই বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন তারেক রহমান।

বৈঠকগুলোতে তারেক রহমান অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বিদেশি প্রতিনিধিদের কথা শুনছেন এবং তাঁর দলের লক্ষ্য-পরিকল্পনা তুলে ধরছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা পুরোপুরি উদ্ভাসিত হবে একটি সৎ, দক্ষ এবং জনমতের ভিত্তিতে গঠিত সরকারের অধীনে।

তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সাম্প্রতিক বৈঠক দীর্ঘদিনের জল্পনা ও বিভ্রান্তিকে স্পষ্টভাবে খণ্ডন করেছে বলে মনে করছে বিএনপির ঘনিষ্ঠ মহল। এই বৈঠক শুধু তারেক রহমানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আস্থার প্রতিফলন নয়, বরং বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতি দেশটির সমর্থনেরও ইঙ্গিত বহন করে।

সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বিএনপি ও বিদেশি কূটনীতিকদের সাক্ষাৎকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে অভিযুক্ত করা হতো। সেই বাস্তবতা পাল্টে গেছে। এখন কূটনীতিকরা সরাসরি তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশের অগ্রগতি, সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজছেন।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, কূটনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। তারেক রহমানের কূটনৈতিক সক্রিয়তা সেটারই পূর্বাভাস দিচ্ছে।