ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ বিস্তর অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।
আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিএস পদপ্রার্থী তানভীর বারী হামীম এবং এজিএস পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ। লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল প্যানেল দাবি করে, এ নির্বাচন ছিল পরিকল্পিত কারচুপি ও অনিয়মে ভরপুর, যা শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।
ছাত্রদলের উত্থাপিত ১১টি প্রধান অনিয়ম
১. ভোটার ছাড়া ব্যালটে স্বাক্ষর ও ভোট প্রদান: ভোটার উপস্থিত না থাকলেও নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ব্যালট পূরণ করে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রমাণে ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
২. ক্রমিক নম্বরবিহীন ব্যালট পেপার: ব্যালটে ক্রমিক নম্বর না থাকায় ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যালট ছাপা, বিতরণ ও ফেরতের হিসাব প্রকাশ করা হয়নি।
৩. ব্যালট ছাপাখানা গোপন রাখা: কোন ছাপাখানায় ব্যালট ছাপানো হয়েছে, তা জানানো হয়নি। পরবর্তীতে নীলক্ষেতের একটি ছাপাখানায় বিপুল পরিমাণ ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
৪. ভোট গণনার সফটওয়্যার গোপনে যাচাই: গণনার সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি প্রার্থী ও ভোটারদের অজান্তে যাচাই করা হয়েছে, যা গণনার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
৫. পোলিং এজেন্টদের নিয়ে অনিয়ম: নির্বাচনের আগের রাতে পোলিং এজেন্ট তালিকা প্রকাশ করে অনেক প্রার্থীর মনোনীত এজেন্ট বাদ দেওয়া হয়। সময়মতো আইডি কার্ড না পাওয়ায় অনেকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি।
৬. ভোটকেন্দ্র নিয়ে বিভ্রান্তি: পূর্বঘোষিত ৮টি কেন্দ্রের পরিবর্তে ভোটের দিন দেখা যায় ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হচ্ছে, যা প্রস্তুতিপর্বে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
৭. পোলিং অফিসার নিয়োগে প্রশাসনিক অনিয়ম: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চিফ রিটার্নিং অফিসারকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়, যাদের অনেকেই নির্বাচনি আচরণবিধি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
৮. নিরাপত্তা সদস্যদের পক্ষপাতমূলক আচরণ: বিএনসিসি, রোভার ও গার্লস গাইড সদস্যদের সহায়তায় বহিরাগতদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনকে পরে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করা হয়।
৯. ভোট গণনায় এজেন্টদের দূরে রাখা: অনেক কেন্দ্রে এজেন্টদের গণনা প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। তারা রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসেন।
১০. অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও মার্কার সংকট: স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের অভাব এবং দুপুরের পর অনেক কেন্দ্রে মার্কার না থাকায় ভোটাররা বলপেন দিয়ে ভোট দেন, যা ওএমআর মেশিনে গণনায় ধরা না পড়ার অভিযোগ রয়েছে।
১১. আঙুলের কালি সহজে মুছে যাওয়া: আঙুলের কালি দ্রুত মুছে যাওয়ায় একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
প্রশাসনের নীরব ভূমিকা পালন করেছে এমন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীদের কথা দিয়েছিলাম যে, জয়-পরাজয় যা-ই হোক, আমরা তাদের পাশে থাকব। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আজকের এই প্রতিবাদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গণতন্ত্র চর্চার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। কিন্তু অনিয়ম, গোপনীয়তা ও পক্ষপাতমূলক আচরণের মাধ্যমে সেটিকে কলঙ্কিত অধ্যায়ে পরিণত করা হয়েছে।’
ছাত্রদল প্যানেলের দাবি, এসব অনিয়ম তদন্তের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথে ফিরে আসতে হবে।