ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন : অভিযুক্তের আসল নাম-পরিচয় জানা গেছে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০৯:২০ এএম
ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে ফ্ল্যাটে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মী ‘আয়েশা’র প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার আসল নাম, ঠিকানা ও স্বামীর তথ্য জানা গেলেও মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করা হলেও গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হবে না। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, তাকে জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যার প্রকৃত কারণ উঠে আসবে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের একটি ১৪তলা ভবনের সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার নাটোরে মা-মেয়ের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ বেশকিছু মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।

ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, হত্যার পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ভবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে ‘আয়েশা’ পরিচয়ে কাজ নেওয়া প্রায় ২০ বছর বয়সি এই তরুণীকেই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করছে পরিবার। হত্যার পর থেকেই তিনি পলাতক।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, গৃহকর্মী নিজের প্রকৃত নাম, ঠিকানা ও পরিচয় গোপন করেছিলেন। কাজে যোগ দেওয়ার সময় সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোন না থাকলেও বাসা থেকে যে ফোনটি নিয়ে গেছেন, বেরিয়েই তা বন্ধ করেন। আশপাশের অধিকাংশ সিসিটিভি অচল থাকায় তিনি কোন পথে পালিয়েছেন, তা নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া লায়লা আফরোজের পরিবারের সঙ্গে তরুণীর আগের কোনো ফোন যোগাযোগও পাওয়া যায়নি। সবসময় বোরকা পরায় সিসিটিভিতে তার মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। ফলে তাকে শনাক্ত করতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তদন্তকারীদের কাজ করতে হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, গৃহকর্মী ভুল নাম-ঠিকানা দেওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত করতে সময় লেগেছে। তবে প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জোড়া খুনের ঘটনায় সোমবার রাতে নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ আছে, সকাল ৭টার দিকে তিনি স্কুলে যাওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না পেয়ে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়ের লাশ দেখতে পান। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা ত্যাগ করেন। যাওয়ার সময় তিনি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যান।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার দেহে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন।

ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার সকালে মা-মেয়ের মরদেহ নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছায় নেওয়া হয় এবং জোহরের নামাজের পর দাফন সম্পন্ন হয়।