ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫

সংবিধানে নয়, বাস্তবেই স্বাধীন কমিশন চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি- সংগৃহীত

সংবিধানে নয়, বাস্তবেই কার্যকর ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কেবল সংবিধানে স্বাধীনতা উল্লেখ থাকলেই হবে না, সেই স্বাধীনতা যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে নিরপেক্ষ ও উপযুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

বুধবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৮তম দিন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সবসময়ই বলেছি, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আলাদা নিয়োগ প্রক্রিয়া না রেখে সংশ্লিষ্ট আইনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আচরণবিধি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে—এ বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই।’

তিনি জানান, সব পক্ষের আলোচনায় একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠনে সিলেকশন কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। এতে থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার (সভাপতি), বিরোধী দলের মনোনীত ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতির মনোনীত একজন আপিল বিভাগের বিচারপতি।

এই সিলেকশন কমিটির সহায়তায় প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে, যেখানে সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ নাগরিকরা প্রার্থী হিসেবে নাম জমা দিতে পারবে। সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এই অনুসন্ধান কমিটির কাঠামো নির্ধারণের প্রস্তাবও দেন সালাহউদ্দিন।

তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে, যা সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠানো হবে। এরপর কমিটি চাইলে সেই তালিকা থেকে বা নিজেরা আরও প্রার্থী বিবেচনায় নিয়ে সর্বসম্মতিতে কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

আগের প্রস্তাবে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে নাম পাঠানোর কথা থাকলেও নতুন প্রস্তাবে তা বাদ দিয়ে প্রতিটি পদের জন্য একটি করে নামই পাঠানো হবে। কমিশনারদের মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে পাঁচ বছর।

এছাড়া সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে একটি নতুন উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে, যাতে বলা হয়েছে সংসদ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করবে এবং তাদের জন্য আচরণবিধি নির্ধারণ করবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন কমিশন চাই, যারা সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। অতীতে বারবার কমিশন গঠন হলেও তারা কার্যকরভাবে স্বাধীন ছিল না, এ অভিজ্ঞতা জাতির সামনে স্পষ্ট।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আজ জাতি সে অবস্থানে পৌঁছেছে। এখন প্রয়োজন কেবল আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। আমরা বিশ্বাস করি, পরবর্তী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন কমিশন গঠন এখন অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া ও তাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের যে রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তি গড়ে তুলবে।’