এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গত কয়েক দিন ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, তিনি প্রেসক্রাইব করা ওষুধ গ্রহণ করতে পারছেন, যা চিকিৎসকদের মতে পরোক্ষভাবে ইতিবাচক অগ্রগতি।
হাসপাতাল ও দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতার মাঝেও তার বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের আশা, নতুন করে তার অবস্থার অবনতি না হলে ধীরে ধীরে উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ম্যাডামের অবস্থা গত কয়েক দিন আগের মতোই আছে। তবে তিনি ওষুধগুলো সহনশীলভাবে গ্রহণ করতে পারছেন, যা অবশ্যই উন্নতির লক্ষণ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে ম্যাডাম আগের অবস্থাতেই আছেন।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, মেডিকেল বোর্ড ২৪ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে নিয়মিত খোঁজ নিতেন। এখন তিনি দেশে এসে সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা মনিটর করছেন।
তিনি আরও জনগণের কাছে দোয়া কামনা করেন এবং গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে আগে ৫ ডিসেম্বর এবং পরে ৭ ডিসেম্বর লন্ডনে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিএনপি জানায়, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকলেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ যাত্রার ধকল সহ্য করার মতো উপযোগী কি না, সেটিই এখন মূল বিবেচ্য।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশে নেওয়ার সব প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই মেডিকেল বোর্ড মনে করবে যে তিনি নিরাপদে ট্রান্সফার হতে পারবেন, তখনই লন্ডনে নেওয়া হবে।
তিনি জানান, কারিগরি সমস্যার কারণে একসময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারেনি, আর সেই মুহূর্তে মেডিকেল বোর্ডও বিমানযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেয়।
রোববার দুপুরে এবিএম আব্দুস সাত্তারও নিশ্চিত করেন, এখনো বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এরপর স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও তার চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন।
৭৯ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসের মতো নানা জটিলতায় ভুগছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, বয়স ও বহুরোগ একসঙ্গে থাকায় তার চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল ও ধীরগতিসম্পন্ন।
বিএনপির নেতারা দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।



