মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে নিহত আনজুমের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং তার কবর জিয়ারত করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো অবিচার চাই না, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে বলছি, তাদের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে চলে।’
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি কোনো শক্তি কিংবা প্রভাবের কাছে প্রভাবিত হয়ে অন্যায় করেন, তাহলে তিনি আল্লাহর দরবারে ধরা খাবেন, দুনিয়াতেও ধরা খাবেন। আমরা কিন্তু ছাড় দেব না। কারণ এই খুনি হলো আত্মস্বীকৃত খুনি।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘এই খুনি আনজুমকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে, সে নিজেই স্বীকার করেছে। এখানে অন্য কোনো সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচার করবে, বিচারকের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা কাম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘শুনেছি, এই হত্যা মামলা নিয়ে অনেকেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। যদি তা হয়ে থাকে, আমরা তা প্রতিহত করব। ন্যায়বিচারের জন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাব। মজলুম পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। এত বড় জঘন্য কাজের পর যদি অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত না হয়, তাহলে এলাকায় আরও বড় শয়তানের জন্ম হবে।’
এ সময় নিহত আনজুমের পিতা আব্দুল খালিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরী, সহকারী সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম খান ও আলাউদ্দিন, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি লুৎফুর রহমান ও ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
জানা যায়, গত ১২ জুন সকাল ৭টার দিকে আনজুম পার্শ্ববর্তী সিংগুর গ্রামে কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয়। সে ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে এবং শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
নিখোঁজের দুদিন পর ১৪ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির পাশের ছড়ার পাড়ে দুর্গন্ধ পেয়ে আনজুমের ভাই ও মামা তার অর্ধগলিত মরদেহ খুঁজে পান। এ ঘটনায় আনজুমের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ পার্শ্ববর্তী দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহির মিয়ার ছেলে জুনেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।
অভিযুক্ত জুনেল মিয়া পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। এ নিয়ে নিহতের পরিবার, আনজুমের সহপাঠী ও এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জুনেলকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। তার ফাঁসির দাবিতে উপজেলা ও জেলায় দফায় দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আন্দোলন এখনো চলমান।
আপনার মতামত লিখুন :