ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

সংস্কার, বিচার ও পিআরে নির্বাচন না হলে জনগণ মানবে না: গোলাম পরওয়ার

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম
মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি- সংগৃহীত

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে, যা আমরা স্বাগত জানিয়েছি। তবে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার, ছাত্র-জনতার হত্যার বিচার এবং প্রার্থীদের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় নির্বাচন হলেও জনগণ তা মেনে নেবে না।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডে জামায়াতের উদ্যোগে পৃথক ভোটার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গত ১৫ বছরের প্রায় সাড়ে সাত বছর তিনি বিনা কারণে গ্রেপ্তার ও অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার মরহুম পিতার দাফন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম, খুন, হত্যা, জুলুম-নির্যাতন ও বিভিন্ন অন্যায় চালানো হয়েছিল। বিরোধী দলের লোকজনকে তাদের রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার পালনসহ কোনো ধরনের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ তাদের মত প্রকাশ করতে পারেনি।’

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবরার ফাহাদকে তার ফেসবুক আইডিতে পার্শ্ববর্তী দেশের আধিপত্যবিরোধী পোস্টের কারণে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শুধুমাত্র আবরার নয়, শত শত বিরোধী দলের কর্মীও হত্যার শিকার হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, দেশে এক ব্যক্তির একক কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। জনগণ ছিল এক দলের কাছে জিম্মি। কথা বললে গুম, খুন ও জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হতো। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেয়েছে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলা হয়। প্রথম স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, কিন্তু তখনও মানুষের কথা বলার সুযোগ সীমিত ছিল।’

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ ভোটদানের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। দুই হাজার ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং হাজার হাজার ছাত্রের পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে আমরা সমুন্নত রাখতে চাই। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, তিনি উল্লেখ করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হলেও ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনার সময়, রাষ্ট্রীয় শোক পালনকালে, ছাত্র আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল।

জমায়াত নেতা বলেন, ‘আমাদের ছাত্র-জনতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা প্রতিহত করেছে। আমরা চাই, আর কোনো স্বৈরাচারী সরকারের হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক না। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাস্তানি ও দখলদারিত্বের রাজনীতি যেন পুনরায় না ফিরে আসে। এজন্য রাষ্ট্র কাঠামোতে মৌলিক সংস্কার করা জরুরি। এই সংস্কারের মাধ্যমে দেশে যে কোনো ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাবে।’

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী। 

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মাস্টার রফিকুল ইসলাম, মো. মকিত শেখ, ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যা, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল হাসান খান, ড. আজিজুল হক, শেখ মো. আলাউদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফয়জুল কবির লিঠু, মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, মাওলানা জুবায়ের হোসেন ফাহাদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রহিম খান, মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আসলাম সরদার, গোলাম মোস্তফা, আশরাফুল আলম, মাওলানা আলী আকবর ফারাজী, মাওলানা ইমদাদুল হক, ইউপি সদস্য মো. শামীম সরদার ও মো. আলমগীর মোল্যা। সমাবেশের পরিচালনায় ছিলেন গাজী আল আমিন ও মো. আসাদ শেখ।