ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

‘কোনো মিডিয়া-মিলিটারি নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় যেতে চাই না’

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি-সংগৃহীত

জনগণ যদি আমাদের ম্যান্ডেট দেয় বা তারা যদি মনে করে আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার উপযোগী তাহলে যেতে চাই। কোনো মিডিয়া, মিলিটারিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পাশের দেশ ভারতের কনসেন্ট নিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

বেরোবির সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ মোট ৩০ জন এ মামলার আসামি। এর মধ্যে ৬ জন বর্তমানে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।

অন্যদিকে ২৪ আসামি এখনও পলাতক, যাদের পক্ষে সরকারি খরচে নিয়োগ করা চার আইনজীবী আদালতে নিজ নিজ যুক্তি তুলে ধরছেন।

২৮ আগস্ট আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসা সহায়তাকারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং আন্দোলনকারীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়।

এর আগে, ২৭ নভেম্বর ১৮তম দিনের মতো ২১ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ নভেম্বর এ মামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তার জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। তবে সাক্ষী হাজির হলেও বিশেষ কারণে নেওয়া হয়নি। ২৩ নভেম্বর জবানবন্দি দেন এক শিক্ষার্থী। আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া মৃত ঘোষণার পর পথ থেকে তার লাশটি পুলিশ কেড়ে নিয়েছিল বলেও জানিয়েছেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও গ্রেপ্তারদের আইনজীবীরা। ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া। তিনিও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

গত ১৬ নভেম্বর জবানবন্দি দিয়েছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক। ১৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন। ১৩ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দেন পুলিশের নায়েক আবু বকর সিদ্দিক। ১২ নভেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য দেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম। রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ১১ নভেম্বর জবানবন্দি দেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদেরও একজন ছিলেন। ১০ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান। তিনিও হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। এ মামলায় যথাক্রমে ৪ নভেম্বর, ২১ ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী না আনতে পারায় পরপর তিনবার সময় পেছানো হয়।

চলতি বছরের ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

এর আগে ৬ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) গঠন করে। ২৪ জুন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

২০২৩ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আন্দোলনের প্রথম শহীদ হিসেবে তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

আদালতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য থেকে উঠে এসেছে, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গুলিবর্ষণ এবং পরবর্তী সময়ে লাশ জব্দের মতো ঘটনা।

মামলার অগ্রগতি, প্রত্যক্ষদর্শীর সংখ্যা এবং জবানবন্দির ধারাবাহিকতায় আজকের সাক্ষ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিম। হাসনাত আবদুল্লাহর জবানবন্দি মামলার ঘটনার রাজনৈতিক ও মাঠপর্যায়ের বিশ্লেষণে নতুন তথ্য যোগ করতে পারে।