বর্তমান সময়টা হলো তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আমরা প্রতিদিন নানা কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি ফোন কল, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের সেবা নিতে। আর এসব সেবার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ছোট্ট জিনিস সিম কার্ড। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার নামে কয়টি সিম নিবন্ধিত রয়েছে?
যদি না জেনে থাকেন, তাহলে আপনি বড় একটি ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ অনেক সময় কারো অজান্তেই তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ব্যবহার করে সিম নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সেই সিম যদি কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হয়, তাহলে আপনি হতে পারেন আইনি জটিলতার শিকার।
বিটিআরসি’র নতুন সিদ্ধান্ত: সিম সীমা ১৫ থেকে কমে ১০ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি এক ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১৫ আগস্ট ২০২৫ থেকে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০টি সিম ব্যবহার করতে পারবেন।
আগে এই সীমা ছিল ১৫টি। কিন্তু দিন দিন সিম জালিয়াতি, অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং অপ্রয়োজনীয় নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিটিআরসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় সিমগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করা হবে।
কেন এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ?
নিরাপত্তা ও আইনি জটিলতা এড়াতে অপরিচিত সিম আপনার নামে নিবন্ধন হয়ে গেলে, যদি সেটা অপরাধে ব্যবহৃত হয়, তবে তার দায় গিয়ে পড়বে আপনার ওপরেই।
মোবাইল ব্যাংকিং/টাকা চুরি বন্ধে সতর্কতা আপনার নামে নিবন্ধিত কোনো সিম যদি নগদ/বিকাশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তাহলে আপনার টাকা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
চাকরি, সরকারি নথি বা ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাধা যদি একাধিক সিম থাকায় মোবাইল নম্বর মিল না খায়, তাহলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
কিভাবে জানবেন আপনার নামে কয়টি সিম নিবন্ধন আছে?
আপনি খুব সহজেই ঘরে বসে মাত্র কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে জানতে পারবেন আপনার এনআইডি দিয়ে কতটি সিম নিবন্ধন করা হয়েছে।
ধাপ ১: আপনার মোবাইল ফোনে ডায়াল করুন – *16001#
ধাপ ২: ফিরতি মেসেজে আপনার এনআইডির শেষ চারটি সংখ্যা চাওয়া হবে।
ধাপ ৩: ৪টি সংখ্যা লিখে রিপ্লাই দিন।
ধাপ ৪: ফিরতি মেসেজে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার নামে কতটি সিম এবং কোন কোন অপারেটরের সিম আছে।
যেমন:
গ্রামীণফোন: ৩টি
বাংলালিংক: ২টি
রবি: ৪টি
টেলিটক: ১টি
এভাবে আপনার সম্মতিক্রমে রেজিস্ট্রার করা সিমগুলোর সংখ্যা ও অপারেটর দেখতে পারবেন। যদিও নম্বরের পুরো ডিজিট দেখা যাবে না, কিন্তু শুরু ও শেষ তিনটি ডিজিট থাকবে।
কোন নম্বর কে নিবন্ধন করেছে তা জানবেন কিভাবে?
বর্তমানে বিটিআরসি’র নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী, কেউ অন্য কারো মোবাইল নম্বর কোন এনআইডিতে নিবন্ধিত—তা জানতে পারবে না।
এই তথ্য শুধুমাত্র:
মোবাইল অপারেটর
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা
এরাই অ্যাক্সেস করতে পারে।
তবে আপনি চাইলে নিজের নামে সিম আছে কি না তা সহজেই জানতে পারবেন উপরের *16001# পদ্ধতিতে।
অপ্রয়োজনীয় সিম বাতিল করবেন যেভাবে
যদি দেখেন, আপনার নামে এমন কোনো সিম নিবন্ধন আছে, যা আপনি ব্যবহার করেন না তাহলে দ্রুত তা বাতিল করুন। এর জন্য আপনাকে করতে হবে
সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যাওয়া
এনআইডি দেখিয়ে বাতিলের আবেদন করা
কখনো কখনো বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করতে হতে পারে
বাতিল করার সুবিধা:
অপ্রয়োজনীয় খরচ কমবে
অপরাধমূলক ঝুঁকি কমবে
ফেসবুক/ব্যাংক/বিকাশে সঠিক নম্বর বজায় থাকবে
কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন?
বিটিআরসি’র ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী:
বাংলাদেশে মোট ১৮ কোটি ৬২ লাখ সক্রিয় সিম রয়েছে
কিন্তু প্রকৃত গ্রাহক মাত্র ৬ কোটি ৭৫ লাখ
এর মধ্যে:
৮০% গ্রাহকের নামে ১-৫টি সিম
১৬% গ্রাহকের নামে ৬-১০টি সিম
৩% গ্রাহকের নামে ১১-১৫টি সিম!
অর্থাৎ, এই ৩% গ্রাহকই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে!
নতুন নিয়মে কী হবে?
যাদের নামে ১০টির বেশি সিম আছে,
তাদের একটি তালিকা মোবাইল অপারেটরদের কাছে যাবে
অপারেটর গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইবে
কোন ১০টি সিম রাখতে চান
অগ্রাধিকার দেওয়া হবে:
বেশি কল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা নম্বর
বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি এমএফএস-যুক্ত নম্বর
গ্রাহক সাড়া না দিলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপ্রয়োজনীয় সিম বন্ধ করে দেওয়া হবে
সচেতন থাকুন, প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচুন
নিজের এনআইডি কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না
সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় সব তথ্য যাচাই করে দিন
বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিলেও খেয়াল রাখুন
ফোন হারালে, সঙ্গে সঙ্গে সিম ব্লক করুন