ঢাকা মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫

কোরবানির পশুর পা ভেঙে গেলে ইসলামী বিধান কী?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৩:১৯ এএম
পা ভাঙা ছাগল। ছবি- সংগৃহীত

ঈদুল আযহার মূল আত্মা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, পশুটি কেনার পর বা পরিবহনকালে অসাবধানতাবশত কোরবানির পশুর একটি পা ভেঙে যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই দ্বিধায় পড়েন- এই পশু দিয়ে কোরবানি আদায় হবে কি না? পশুটির দেখভালই বা কীভাবে করতে হবে?

আসুন জেনে নিই, শরিয়তের দৃষ্টিতে করণীয় এবং চিকিৎসা-পরামর্শ...

শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, কোরবানির পশু হতে হলে সেটির কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলোর অন্যতম হলো পশুটি সুস্থ ও অঙ্গপ্রতঙ্গ সম্পূর্ণ হওয়া। তবে কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পশুটি কেনার পর যদি দুর্ঘটনাক্রমে এর অঙ্গহানি ঘটে (যেমন পা ভেঙে যাওয়া), তাহলে কোরবানি বৈধ হয়। হাদিসের আলোকে ও অধিকাংশ ফিকহবিদদের মতে, এটি ‘মাজবুর’ বা ‘অক্ষমতা’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘যদি পশু ক্রয়ের পর তা পা ভেঙে ফেলে বা আহত হয়, তবে সে পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ হবে।’ (ফিকহে হানাফি ও আল-মাবসূত, সারাহসি)

তবে এই শর্ত প্রযোজ্য তখনই, যখন তা দুর্ঘটনাবশত ঘটে এবং ক্রয়কালে পশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল।

চিকিৎসা ও পরিচর্যা

১. প্রাথমিক চিকিৎসা: পা ভাঙলে অবিলম্বে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে ভাঙা জায়গায় ঠান্ডা পানির সেঁক ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখুন।

২. চিকিৎসকের পরামর্শ: অনেক ক্ষেত্রে সামান্য ভাঙা হলে সেটি জোড়া লাগানোর ব্যবস্থা করা যায়। তবে কোরবানির সময় খুব কাছাকাছি হলে পশুকে অকারণে কষ্ট না দিয়ে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

৩. আলাদা জায়গায় রাখুন: পা ভাঙা পশুকে অন্য পশুদের সঙ্গে রাখা যাবে না, কারণ ধাক্কা বা চলাফেরা থেকে আরও ক্ষতি হতে পারে। আলাদা, শান্ত পরিবেশে রাখুন।

৪. খাদ্য ও পানি: পর্যাপ্ত পানি ও সহজপাচ্য খাবার দিন যেন পশু দুর্বল না হয়। মনে রাখবেন, কোরবানির আগ পর্যন্ত এর সুস্থতা ও ভালো থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

মানবিকতা ও সদিচ্ছা-ইবাদতের প্রাণ

অনেক সময় পা ভেঙে গেলে কিছু মানুষ পশুটিকে ‘অযোগ্য’ ভেবে ফেলে দিতে চান বা অমানবিক আচরণ করেন। এটি একেবারেই অনুচিত। কোরবানি কেবল মাংস পাওয়ার ইবাদত নয়, এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার পরীক্ষা।