রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

কত দিনের মধ্যে কোরবানির গোশত খেয়ে শেষ করতে হবে?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

গরুর মাংস। ছবি-সংগৃহীত

গরুর মাংস। ছবি-সংগৃহীত

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আর এর মাধ্যমে দরিদ্র ও সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। কোরবানির মাংস শুধু নিজের পরিবারের জন্য নয়, বরং আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে সমাজে সহমর্মিতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করাও এর অন্যতম শিক্ষা।

তবে প্রায়ই একটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে—এই কোরবানির গোশত কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়? ইসলাম কি এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়েছে?

এই ফিচারে আমরা ইসলামি দৃষ্টিকোণ, হাদিস, সাহাবিদের আমল ও আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্যবিধি মিলিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করব।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ : প্রাথমিক নির্দেশনা

কোরবানি সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে আমরা দেখতে পাই, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম দিকে কোরবানির মাংস তিন দিনের বেশি রাখার অনুমতি দেননি। তবে এটি ছিল একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে দেওয়া নির্দেশনা।

সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানির দিন বলেছিলেন: ‘তোমরা তিনদিনের বেশি কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করবে না।’ কিন্তু পরে লোকজন রাসুলুল্লাহর কাছে অভিযোগ করল যে, মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসছে। তখন রাসুল (সা.) বললেন: ‘তোমরা খাও, জমা রাখো এবং সদকা করো।’ (সহিহ মুসলিম: ১৯৭৪)

এই হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাটি ছিল অস্থায়ী এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির কারণে। পরবর্তীকালে সেই নিষেধ তুলে নেওয়া হয়।

ইসলামী স্কলারদের অভিমত

প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার ও মুফাসসিরগণ এ বিষয়ে একমত যে, কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করে খাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই যতক্ষণ না তা পচে যায় বা নষ্ট হয়।

ইমাম নববী (রহ.) বলেন- ‘কোরবানির গোশত খাওয়া, সংরক্ষণ করা, ও দান করা— সবই সুন্নাত।’ (শরহ মুসলিম)

তবে অতিমাত্রায় জমিয়ে রাখা এবং বিতরণ না করে শুধুই নিজের পরিবারের মধ্যে রেখে দেওয়া— এটা ইসলামি শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক।

তিনভাগে বণ্টন : সুন্নত পদ্ধতি

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী কোরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক তৃতীয়াংশ নিজে রাখা, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের দেওয়া এবং এক তৃতীয়াংশ গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা।

এভাবে বণ্টনের ফলে অতিরিক্ত মাংস জমিয়ে রাখার প্রবণতা কমে যায় এবং সমাজের দরিদ্র মানুষেরা ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারেন।

আধুনিক স্বাস্থ্যবিধি ও সংরক্ষণ

বর্তমান সময়ে ফ্রিজ ও ডিপ-ফ্রিজের ব্যবহার আমাদের জন্য মাংস সংরক্ষণকে সহজ করে তুলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন- ফ্রিজে (৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) কাঁচা মাংস ২-৩ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

ডিপ-ফ্রিজে (-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা নিচে) কাঁচা মাংস ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে, তবে মানসম্পন্ন হলে এক বছর পর্যন্তও খাওয়া নিরাপদ।

তবে সংরক্ষণের আগে কিছু স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত। যেমন- মাংস ভালোভাবে ধুয়ে রক্ত ঝরিয়ে নিতে হবে; ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্যাকেট করে রাখা উত্তম; সংরক্ষণের তারিখ লিখে রাখা ভালো যাতে সময়মতো ব্যবহার করা যায়।

যদিও ইসলাম কোরবানির মাংস জমিয়ে রাখার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি, তবে অতিরিক্ত সংরক্ষণ করে যখন সমাজের দরিদ্ররা মাংস থেকে বঞ্চিত হন, তখন তা এই ইবাদতের মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করে।

অনেক সময় দেখা যায়, ধনীরা কোরবানি করলেও মাংসের অধিকাংশই নিজের পরিবারের জন্য রেখে দেন। গরিব প্রতিবেশী বা দরিদ্র আত্মীয়দের কথা ভাবা হয় না। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি নিজে পরিতৃপ্ত হয়ে খায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সুনান বাইহাকি)

সারাংশে বললে, ইসলাম কোরবানির মাংস খেয়ে শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়নি। সংরক্ষণ করা জায়েজ, যতদিন তা খাওয়া নিরাপদ ও নষ্ট না হয়। তবে কোরবানির মাংসের মূল উদ্দেশ্য শুধু ভক্ষণ নয়, বরং সমাজে ভাগাভাগির সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

অতএব, কেউ চাইলে ৩ দিনেই মাংস শেষ করে ফেলতে পারেন, আবার কেউ আধুনিক পদ্ধতিতে ৬ মাস বা এক বছর পর্যন্তও সংরক্ষণ করতে পারেন— এতে শরিয়তের কোনো বাধা নেই। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, কোরবানি মানেই ভাগ করে খাওয়া, ভালোবাসা বিলানো এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!