বেকারত্ব আজকের সমাজের এক বড় বাস্তবতা। বাংলাদেশের মতো দেশে লক্ষাধিক তরুণ উচ্চশিক্ষা শেষ করেও দীর্ঘ সময় ধরে কর্মসংস্থান খুঁজে পান না। চাকরি না পাওয়া, আর্থিক অনিশ্চয়তা, পারিবারিক চাপ ও মানসিক অস্থিরতা—সব মিলিয়ে একজন বেকার মানুষ প্রতিদিন লড়াই করেন বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু একজন মুসলমানের কাছে দুশ্চিন্তা নয়, আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলই হওয়া উচিত প্রধান ভরসা।
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, রিজিকের মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা খুশি হয়ে দেন, আবার কারো জন্য বিলম্ব করে পরীক্ষা নেন। তবে দোয়া, ইবাদত ও আত্মপ্রচেষ্টা দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা গেলে, তিনিই রিজিকের পথ খুলে দেন। এই লেখায় তুলে ধরা হলো বেকারত্ব দূর করতে ৫টি কার্যকর ইসলামি আমল—যা আত্মবিশ্বাস ফেরাবে এবং রিজিকের স্রোত তৈরি করতে সাহায্য করবে।
১. ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন—‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি তোমাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ সামগ্রী দান করবেন এবং প্রত্যেক অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন।’ (সূরা হুদ, আয়াত ৩)
ইস্তেগফার কেবল গুনাহ মাফের দোয়া নয়, বরং এটি পবিত্রতার পথ, রিজিক বৃদ্ধির চাবিকাঠি এবং জীবনের সব সংকট থেকে মুক্তির দরজা। ইমাম হাসান (রহ.) বলেন, রিজিক সংকটে এক লোক তাঁর কাছে এলে তিনি বলেন, ‘ইস্তেগফার করো।’ অর্থাৎ, ক্ষমা প্রার্থনাই বেকারত্বের প্রধান চিকিৎসা।
দৈনিক আমল : অন্তত ১০০ বার বলুন—
“أستغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه”
(আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।)
২. হজরত মূসা (আ.)-এর দোয়া
হজরত মূসা (আ.)-এর জীবনে এমন এক সময় আসে, যখন তিনি ছিলেন নিঃসঙ্গ, কর্মহীন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। তখন তিনি একটি দোয়া করেন:
“رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ” (সূরা কাসাস, আয়াত ২৪)
‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার জন্য যেকোনো কল্যাণ অবতীর্ণ করেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।’
এই দোয়াটি মূলত কর্ম ও জীবিকা অন্বেষণে আল্লাহর কাছে বিনয় প্রকাশের নিদর্শন। চাকরিপ্রত্যাশী ও বেকার ব্যক্তিরা এটি প্রতিদিন ৭, ১১ বা ২১ বার পাঠ করলে রিজিকের পথ সুগম হয়—এমন বিশ্বাস বহু আলেমগণের।
৩. সূরা ওয়াকিয়া পাঠ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘সূরা ওয়াকিয়া হচ্ছে ধন-দৌলতের সূরা। তোমরা এটি নিজেদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও।’
(বায়হাকি, শুয়াবুল ইমান)
বহু হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) সাহাবিদের নির্দেশ দিতেন রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করতে, যাতে তারা কখনো অভাবগ্রস্ত না হন। সুরাটি মূলত রিজিক বৃদ্ধি ও জীবনের নিরাপত্তার অন্যতম কুরআনিক ওযীফা হিসেবে পরিচিত।
দৈনিক আমল—প্রতি রাতেই ঘুমানোর আগে সূরা ওয়াকিয়া (সূরা ৫৬) পাঠ করুন। সময় না পেলে অন্তত সপ্তাহে ৩ দিন পড়ুন।
৪. সালাতুল হাজত
সালাতুল হাজত বা প্রয়োজনের নামাজ এক বিশেষ আমল, যার মাধ্যমে বান্দা তার প্রয়োজনীয় চাওয়া আল্লাহর দরবারে নিবেদন করে। বেকারত্ব বা আর্থিক সংকটে পড়ে দুই রাকাত সালাতুল হাজত আদায় করে দোয়া করলে অনেক সময় দ্রুত ফলাফল দেখা যায়।
নিয়ম—দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর হজরত মূসা (আ.)-এর দোয়া বা নিজ ভাষায় আন্তরিকভাবে দোয়া করুন।
৫. দোয়া ইউনুস ও আত্মবিশ্বাস
বেকারত্ব কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং একটি মানসিক যুদ্ধও বটে। হতাশা একজন মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দিতে পারে। এমন সময়ে দরকার অন্তরের দোয়া—যেমন হজরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া:
“لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ”
‘আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি পবিত্র, আমি ছিলাম জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭)
এই দোয়া কষ্টে, সংকটে ও একাকিত্বে আত্মা প্রশান্ত করে। যারা দীর্ঘ সময় বেকার জীবন কাটাচ্ছেন, তাদের উচিত এই দোয়াটি প্রতিদিন অন্তত ১০০ বার পাঠ করা।
বেকারত্ব একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানে আঘাত হানে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়—রিজিক একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনিই নির্ধারিত সময় ও রাস্তায় তা পৌঁছে দেন। আমাদের কাজ হলো ধৈর্য, পরিশ্রম ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রাখা। আর সে পথেই কার্যকর হতে পারে এসব আমল। সময় হয়তো লাগবে, কিন্তু মনে রাখবেন—আল্লাহর রাস্তা কোনোদিন বন্ধ হয় না।
আপনার মতামত লিখুন :