অহংকার এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষের চরিত্রকে নষ্ট করে দেয়। অহংকারী ব্যক্তিকে মানুষ অপছন্দ করে, আর আল্লাহ তাআলাও ভালোবাসেন না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ভালোবাসেন না তাদেরকে, যারা দাম্ভিক ও অহংকারী।’ (সুরা নিসা: ৩৬)
আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘পৃথিবীতে অহংকারভরে চলাফেরা করো না। তুমি কোনোভাবেই মাটি বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় পর্বতের মতো হতে পারবে না।’ (সুরা ইসরা: ৩৭)
এছাড়া আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘অহংকার করে মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, আর উদ্ধত ভঙ্গিতে পৃথিবীতে হাঁটো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত ও অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান: ১৮)
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’
এ কথা শুনে একজন সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মানুষ তো পছন্দ করে সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতা পরতে—এটাও কি অহংকার?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। অহংকার হলো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৫)
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অহংকার ত্যাগ করে বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে মানুষের কাছে সম্মানিত করে দেন। আর যে অহংকার করে, নিজেকে বড় মনে করে, আল্লাহ তার সম্মান কমিয়ে দেন। মনে মনে নিজেকে বড় ভাবলেও মানুষের চোখে সে ছোট হয়ে যায়।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা করলে সম্পদ কমে না। যে ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা আরও উঁচু করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৩৫৬)
অহংকার দূর করার ৪টি উপায়
১. নিজের ত্রুটি নিয়ে ভাবুন
নিজের দোষ, দুর্বলতা ও অক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করুন। নিজেকে সবসময় ছোট মনে করুন। এতে অন্তরে বিনয় সৃষ্টি হবে।
২. আগে সালাম দিন
ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দেওয়ার অভ্যাস করুন। সালাম অন্তরের অহংকার গলিয়ে দেয়।
৩. এ দোয়াটি বেশি পড়ুন
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي شَكُوْرًا وَاجْعَلْنِي صَبُوْرًا وَاجْعَلْنِي فِيْ عَيْنِي صَغِيْرًا وَفِيْ أَعْيُنِ النَّاسِ كَبِيْرًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা জআলনী শাকূরা, ওয়াজআলনী সাবূরা, ওয়াজআলনী ফি আইনী সাগীরা, ওয়া ফি আইয়ুনি ন্নাসি কাবীরা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে কৃতজ্ঞ বানান, আমাকে ধৈর্যশীল বানান, আমার নিজের চোখে আমাকে ছোট এবং মানুষের চোখে বড় বানান।
৪. শয়তানের পরিণতি স্মরণ করুন
অহংকারের কারণে শয়তান অভিশপ্ত হয়েছে এবং চিরজাহান্নামী হয়েছে—এটা সবসময় মনে রাখুন। অহংকারবিষয়ক আয়াত ও হাদিসগুলো নিয়মিত পড়ুন।